ভোট দিয়ে কী হইবো
‘আমার জামাই মারা গেছে তিরিশ বছর আগে। আমার নিঃসন্তান মাইয়া মাইনষের বাইত কাজ কইরা আমারে খাওয়ায়। সময় মতো ওষুধ পত্তর হাইনা। কত চেয়ারম্যান-মেম্বর আইল-গেল কেউ কোন সাহায্য করল না। আমি ছেরির (মেয়ের) ভাঙ্গা ঘরে থাকি। আমার ছেড়া (ছেলে) নাই। মাইয়াগো কাছে থাকি। শুনেছিস শেখের বেটি গরিব-দুঃখি মানুষরে ঘর দেয়। আমার কহালে (কপালে) তাও জুটলো না।
গতকাল রোববার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার শিন্নীপাড়া ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে এ কথা বলেন মাসুমা বেগম (১০৫)। তিনি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট (দুলোপুতা) গ্রামের মৃত রমজান আলীর স্ত্রী।
পাঁচহাট দুলোপুতা গ্রামের রমজান আলীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে মাসুমা বেগমের। বিয়ের পর প্রায় আট দশক পার করেছেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো ছেলে সন্তান নেই। তিনি তিন কন্যার জননী। তার স্বামীর ভিটেবাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জমি নেই। মেয়ে বিধবা ভাতা পেলেও মাসুমা ত্রিশ বছরেও পাননি বিধবা ভাতা। তিনি ভাঙ্গা একটি ঘরে তার স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ের সঙ্গে থাকেন। কখনো গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (ইজিপিপি) শ্রমিকের কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। এভাবেই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন মাসুমা বেগম। বয়সের ভারে তিনি এখন চোখেও খুব একটা দেখেন না। কানেও শুনতে পান না। শরীরও নেতিয়ে গেছে।
মাসুমার দ্বিতীয় মেয়ে কল্পনা বেগম বলেন, আমার মার শত বছর পার হলেও দরিদ্র মানুষ হিসেবে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। চলতি বছর একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছে। আমি বিধবা ভাতা পেলেও আমার মা কখনো বিধবা ভাতা সুবিধা ভোগ করতে পারেনি। মা এখন বয়সের ভারে চোখে দেখেনা কানেও শুনেনা।
আনন্দবাজার/এম.আর