ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শপথ

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শপথ

আবহাওয়ার বৈরিতা উপেক্ষা করে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শপথ নিয়েছেন নারী-পুরুষ, তরুণ, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধিসহ সুবর্ণচরের তিন শতাধিক মানুষ। বিশ্বব্যাপী চলমান কর্মসূচি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ পক্ষের অংশ হিসেবে সোমবার সুবর্ণচর পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক উন্মুক্ত সংলাপ আয়োজিত হয়।

উন্নয়ন সংগঠন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান, নিজেরা করি, বন্ধন’র যৌথ উদ্যোগে একশনএইড বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের সহায়তায় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে উন্মুক্ত সংলাপ’ শীর্ষক এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠনে সুবর্ণচর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা চৌধুরী, চর জব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল হক, পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন বাবুল প্রমূখ অতিথি হিসেবে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এর প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ।
নারীর প্রতি চলমান সহিংসতার কারণ, করণীয় ও প্রতিকার বিষয়ে অংশগ্রহণকারী ও অতিথিদের মধ্যে নানা প্রশ্নোত্তরের মধ্যে দিয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এখানে নারীর প্রতি সহিংসতার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যৌতুক, বাল্যবিয়ে। প্রায়শই দেখা যায়, জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে মিথ্যে রেজিস্ট্রেশন হয়। চলমান করোনা মহামারীতে এখানে বাল্যবিয়ের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। অনেক সময় প্রশাসনের সহায়তায় বিয়ের আয়োজন বন্ধ করা গেলেও কোর্টে গিয়ে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। তারা বলেন এই অঞ্চলে এক ধরণের নয়, অনেক ধরণের নিপীড়নও আছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা এখন সময়ের দাবি। মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক নারীরা মামলা করতে চান না। ফলে অনেকেই আইনি সহায়তা নেয়া থেকে পিছিয়ে যান।

তারা আরো বলেন, ‘নারীর প্রতি কোনো রকমের সহিংসতা হলে আমরা এলাকার মুরুব্বিদের কাছে যাই। তারা আইনি সহায়তা নিতে বললে পরে দেখা যায় কোনো তদন্তে এলাকার কেউ কথা বলেন না। এক্ষেত্রে আরো জটিলতা তৈরি হয়’।

বক্তাগণ বলেন, নারীদের জন্য প্রধান বাধা তৈরি করে সমাজ- নারীদের আসলে কোনো কথা বলতে দেয়া হয়না। সহিংসতা, নিপীড়নের কথা বলতে গেলে আবারো নিপীড়নের শিকার হতে হয়, এই সহিংসতার তীব্রতা প্রথমবারের চেয়েও বেশী হয় কখনো কখনো। সকল ধরণের সহিংসতা বন্ধ করতে আমাদের পারিবারিক শিক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সুবর্ণচর উপজেলার দুই শতাধিক নারী পুরুষ, তরুণ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, নোয়াখালীতে কর্মরত উন্নয়ন সংগঠন এনআরডিএস, সাগরিকা, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা, এসো গড়ি উন্নয়ন সংস্থা, প্রচেষ্টা নারী উন্নয়ন মেলা, এফপিএবি, নোয়াখালী নারী অধিকার জোট, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট, এসডিপি, পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট, দুর্যোগকালীন নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ প্লাটফর্ম-প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ গড়ি এই আয়োজনে সহউদ্যোক্তা হিসেবে অংশ নেয়।

জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যক্তিগত এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথের মধ্যদিয়ে এই আয়োজন সমাপ্ত হয়।

প্রসঙ্গত: বিগত বছরগুলোতে নারীর প্রতি বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার ঘটনায় সুবর্ণচর উল্লেখযোগ্য সংখ্যকবার আলোচনায় এসেছে। নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিতে এবং সহিংসতামুক্ত সংস্কৃতিচর্চা তৈরি ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ২০১৯ এবং ২০২০ সালেও পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রানের আয়োজনে সুবর্ণচরে বহুপাক্ষিক সংলাপ আয়োজিত হয়।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন