ঢাকা | মঙ্গলবার
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওয়াসার পানির অর্ধেকই অপচয়

ওয়াসার পানির অর্ধেকই অপচয়

ঢাকায় দৈনিক চাহিদা ২৫০ কোটি লিটার
দৈনিক অপচয় ১২৫ কোটি লিটার

ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) সরবরাহ করা পানির শতকরা ৪০-৫০ ভাগই অপচয় হয়ে যায়। রাজধানীতে বর্তমানে দৈনিক পানির চাহিদা ২৫০-২৫৫ কোটি লিটার। ওয়াসার সরবরাহ করা এই পানির মধ্যে প্রতিদিন অপচয়ই হচ্ছে ১০০-১২৫ কোটি লিটার।

মূলত চারটি কারণে বিপুল পরিমাণ এই পানির অপচয় বন্ধ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘ওয়াটার ফর দ্য পুওর ঢাকা’স ওয়াটার ইউটিলিটিস টার্ন অ্যারাউন্ড চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ঢাকায় পানি অপচয়ের এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির বড় অংশ অপচয় হয়ে যায়।

অপচয়ের চার কারণ
১. পাইপলাইনে ছিদ্র
২ ত্রুটিপূর্ণ মিটার ব্যবস্থা
৩. ব্যাপকহারে পাম্প ব্যবহার
৪. অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রতিদিন ঢাকা ওয়াসা যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করে, পানির বিল করা হয় তার অর্ধেক পরিমাণের। এ বিলের আবার ৩৮ শতাংশ অনাদায়ী থেকে যায়। এ হিসেবে ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন যত পানি সরবরাহ করে, বিল পায় তার তিন ভাগের এক ভাগ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঢাকার পাঁচ হাজার বস্তিতে বসবাস করা প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ওয়াসার অবৈধ সংযোগের পানি ব্যবহার করছে। অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে ব্যবহার হওয়া বিপুল পরিমাণ পানি অপচয়ের তালিকায় চলে যাাচ্ছে। পানি অপচয়ের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে ওয়াসা।

প্রতিবেদনে পানি অপচয়ের পছনে চারটি কারণকে দায়ি করা হয়। প্রথমত, পাইপলাইনে ছিদ্র থাকার কারণে অপচয় বেশি হয়। তবে ছিদ্র শনাক্ত না হওয়ার পাশাপাশি শনাক্ত হওয়ার পরও মেরামত না করার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ও অপ্রচলিত মিটার ব্যবস্থা। একই সঙ্গে মিটারস্বল্পতার কথাও বলা হয়েছে। তৃতীয় কারণ হিসেবে ব্যাপক হারে পানি তোলার পাম্প ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। চতুর্থ কারণ হিসেবে পানির অবৈধ সংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এডিবির প্রতিবেদনে।

শুধু এডিবির প্রতিবেদনেই নয়, ঢাকা ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদনেও পানি অপচয়ের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে সরবরাহ করা পানির ৪০-৪৫ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। অপচয়ের জন্য এডিবি যেসব কারণ চিহ্নিত করেছে, ওয়াসাও সেগুলোকে বড় কারণ হিসেবে দেখছে। পাশাপাশি পানির অপর্যাপ্ত চাপ এবং নিম্নমানের পানিকেই অপচয়ের জন্য দায়ী করছে সংস্থাটি।

ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইনগুলোকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা আর অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ বা বৈধ করে দেয়া হলে ঢাকায় পানির অপচয় অনেকটাই কমে আসবে। এ লক্ষ্যে ঢাকা শহরবাসীকে সার্বক্ষণিক নির্ভরযোগ্য পানি সরবরাহ এবং ঢাকা ওয়াসার সেবার মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ‘ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে পানি সরবরাহের একটি উন্নত ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি অবৈধ সংযোগের পরিমাণও কমে আসবে।

এডিবি ও ঢাকা ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদনে সরবরাহ করা পানির ৪০ শতাংশের বেশি অপচয়ের কথা বলা হলেও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের দাবি, ঢাকা ওয়াসার পানি অপচয়ের পরিমাণ ৫-৭ শতাংশের বেশি নয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন