রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সিংহভাগ টমেটো উৎপাদন হয়ে থাকে। এ উৎপাদনের উপরে ভর করেই রাজশাহী জেলায় এবার টমেটোর মৌসুমে ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। প্রতিহেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২২ মেট্রিক টন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার মতিহার থানা এলাকায় টমেটো চাষ হয়েছে ১৪ হেক্টর জমিতে, বোয়ালিয়া ৫ হেক্টর, পবায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া তানোরে ২৫ হেক্টর, মোহনপুরে ১৫ হেক্টর, বাগমারায় ২২৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৯০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৬০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, চারঘাটে ২ হেক্টর ও বাঘায় ৪০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়।
প্রতিহেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২২ মেট্রিক টন। এছাড়া গতবছর ৩ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে পুরো জেলায়। যার সিংহভাগই গোদাগাড়ীর টমেটো।
গোদাগাড়ী পৌর এলাকার টমেটো চাষি সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ‘বিপুল প্লাস’ জাতের টমেটোর চারা জমিতে বপন করেছিলেন। গাছে টমেটো এসেছে। আর কিছুদিন পরে বিক্রি করা যাবে।
গোদাগাড়ীতে আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে টমেটো চাষ শুরু হয়। এটা মূলত বর্ষাকালীন টমেটো। এ উপজেলায় প্রায় ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয়। যার সবগুলো হাইব্রিড। অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের তুলনায় টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বিঘায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। কম করে প্রতিমণ ১ হাজার টাকা করে হলেও ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। যা ধান কিংবা অন্য ফসল চাষে আয় করা সম্ভব নয়।
দুলাল নামে আরেক চাষী জানান, টমেটো চাষের প্রথম দিনে ভালোই দাম পাওয়া যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরো জমির টমেটো কিনে নেন। দুই-তিন মাসের মধ্যে টমেটো নিয়ে জমি ছেড়ে দেবে। তবে বেশির ভাগ চাষী নিজেরাই টমেটো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।
তিনি আরো জানান, টমেটো ব্যবসায়ীরা মূলত বাইরের। তারা এখানে এসে থাকেন। এর পরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টমেটো কিনে ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যায়। সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও থাকে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা জানান, গতবছর ১৫০ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পরিবহন ও শ্রমিক মিলে আরো ২৫ কোটি টাকা। টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে সবমিলে ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিবছর। তিনি আরো জানান, টমেটো সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এ অঞ্চলে টমেটো দু’বারে চাষ হয়। এর মধ্যে একটি রবির আগে উঠে। এ টমেটোর বেশি দাম পান চাষীরা। যা বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। রবি মৌসুমের টমেটো বিক্রি হয় ৫০ থেকে সর্বনি¤œ ৫ থেকে ১০ টাকায়। এ পাঁচ থেকে ১০ টাকা মৌসুমের শেষ সময়ে দাম।
রাজশাহী জেলা কৃষি স সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল জানান, ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয় রাজশাহীতে। এক কথায় টমেটো অর্থকরী ফসল। জেলায় সবচেয়ে বেশি গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষ হয়। আগাম উঠায় চাষিরা বাজারে ভালো দাম পান। চাহিদা বাড়ায় প্রতি বছরই চাষের পরিধি বাড়ছে। আধুনিক চাষের কলাকৌশল নিয়ে সবসময় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পাশে আছেন।
আনন্দবাজার/এম.আর