গাইবান্ধার ৩’শ চরে পালিত হচ্ছে দুর্যোগ সহনীয় ভেড়া। ভেড়া পালন করে সাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা। লাভজনক হওয়ায় ভেড়া পালনের দিকে অধিকহারে ঝুঁকছেন সেখানে বসবাসরত নারীরা। এতে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন তারা। জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস বলছে, উন্নতমানের ভেড়ার সঙ্গে ক্রস করে নতুন জাতের ভেড়ার উদ্ভাবন করেছে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। চরাঞ্চলে দুর্যোগ এলাকায় এই ভেড়া চাষ করে অনেকেই অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধার তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকজুড়ে ৩’শ টি চর রয়েছে। গাইবান্ধার, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলার এসব চরে অন্তত ৩ লাখ মানুষের বসবাস। বিশেষ করে তিস্তাসহ তিন নদীর দুর্গম চর- সুন্দরগঞ্জে কাপাসিয়া, বেলকা, তারাপুর, হরিপুর। গাইবান্ধার মোল্লারচর, কামারজানি, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, কামালেরপাড়া, সাঘাটা সদরসহ অন্তত ১৩টি ইউনিয়ন দুর্গম চরাঞ্চল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরজুরে উন্নতজাতের ভেড়ার দেখা মেলে। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণায় নতুন জাতের এ ভেড়া সাড়া ফেলেছে। এ জাতের ভেড়া পালনে খরচ কম, দুর্যোগ সহনীয়, রোগবালাই কম হয় এবং আকারে বড় হয়।
জানা যায়, কাবিলপুর চরে প্রথম ২৪০ জন নারী একটি করে ভেড়া পালন শুরু করেন। ইতোমধ্যে তারা প্রত্যেকে ৮ থেকে ১০টি করে ভেড়ার মালিক হয়েছেন। এ পরিবারগুলো এখন ভেড়া পালন করে নতুন আশার স্বপ্ন দেখছেন। সংসারের চাহিদা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যয় মিটিয়ে নিজেরাও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও উপকারভোগী মমতা বেগম বলেন, ফ্রেন্ডশীপ নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণার নতুন সফলতা হিসেবে উন্নতমানের ভেড়া দিয়েছেন। ভেড়াগুলো যেমন উঁচু, তেমন লম্বা। দেখতে বেশ সুন্দর। স্বপ্লসময়ে অনেক বড় হওয়ায় তাদের আনন্দের সীমা নেই। ভেড়ার নতুন এ জাত অন্তত ৩০ কেজি ওজন ও বছরে ৪ বার বাচ্চা দেয়।
কাবিলপুর চরের বাসিন্দা মমেনা বেগম বলেন, এখানকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ চাষাবাদ ও গবাদি পশু সম্পদের উপর নির্ভরশীল। কোন না কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করেই তাদের চরে বসবাস করতে হয়। বিয়েসহ অন্যান্য বিপদে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিই তাদের ভরসা। একটা সময় গরু-ছাগল পশু সম্পদ হিসেবে পালন করলেও চরগুলোতে ভেড়া পালনের প্রচলন ছিলো না। একটি ভেড়া থেকে আমি ৫টি ভেড়ার মালিক হয়েছি। দুর্যোগে ভেড়া বিক্রি করে সংসারের খরচ বহন করবো।
শাহনাজ বেগম বলেন, স্বামী দিনমজুরি ও কৃষি কাজ করেন। বছরে তিন-চার মাস কাজ থাকলেও বাকি সময় তেমন কাজ থাকেনা। ফলে সংসারে স্বচ্ছলতা ছিলো না। এখন ভেড়া পালনের বাড়তি আয়ের মুখ দেখছি। সেই টাকায় সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে ।
ফ্রেন্ডশিপ কর্মকর্তা দিবাকর বিশ্বাশ বলেন, সারাবছর বন্যা, খড়া, নদী ভাঙ্গণসহ বিভিন্ন দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে চরবাসীদের বাঁচতে হয়। সে কারণে পশু সম্পদ রক্ষা করা তাদের কঠিন হয়ে পড়ে। আরও বেশি সংখ্যক মানুষের পাশে দাঁড়াতে দুই বছর মেয়াদ শেষে প্রকল্পটি আবার অন্য চরে গিয়ে কাজ করবে। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং একটি দুর্যোগ সহনশীল জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। জেলা
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, এটি ভেড়ার নতুন জাত। উন্নতমানের ভেড়ার সাথে ক্রস করে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভেড়ার উদ্ভাবন করেছেন। চরাঞ্চলের দুযোর্গ এলাকায় এ ভেড়া চাষ করে অনেকেই অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
আনন্দবাজার/এম/আর