১০ মাসে দেশে ১ হাজার ৬৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১ হাজার ৭৫৮ জনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ১২৩ জন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৩২৭ জনের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী। যা মোট মৃত্যুর ৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহত হয়েছেন ১৫১ জন, যা মোট নিহতের ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে। সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি।
২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ১১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২৬ জন নিহত হয়। এ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ আর প্রাণহানি বেড়েছে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ৩৪৯টি, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৮৩টি, মোটরসাইকেলে অন্য যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৭১৫টি এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায় ৬৭২টি দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেলচালক এককভাবে দায়ী। এছাড়া বাসচালক দায়ী ১৭৮টি দুর্ঘটনায়, ট্রাকচালক দায়ী ৪৪৩টি দুর্ঘটনায়, কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৫৮টি।
পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৫৭৭টি জাতীয় মহাসড়কে, ৫২৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ২৯১টি গ্রামীণ সড়কে এবং ২৫৭টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ২৭৪৯টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ১৭১৯টি, বাস ১৯৪টি, ট্রাক ৪৮১টি, কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ১৭২টি, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ৫৬টি, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-নসিমন-ভটভটি-টমটম) ১১৩টি, এবং প্যাডেল চালিত রিকশা ও বাইসাইকেল ১৪টি।
কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো, অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয় এবং ব্যবহারে সহজলভ্যতা ও বাধাহীন সংস্কৃতি, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতাসহ একাধিক কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার সুপারশি দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, গণপরিবহন চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, মোটরসাইকেল চালকদের অধিকাংশই কিশোর-যুবক। তারা বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এবং অন্যদেরও করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ লাখ মোটরসাইকেল চলছে। রাজধানীতেই চলছে ১২ লাখের বেশি। মোটরসাইকেল ৪ চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য করে মোটরসাইকেলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে।
আনন্দবাজার/এজে