রংপুরের পীরগঞ্জে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৬টি পরিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগুন দেওয়া বাড়িঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন করে সবকিছু সাজানোর স্বপ্ন দেখছে এসব পরিবার।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে অনেক বেসরকারি সংস্থা, এনজিও এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থ, খাবার, পোশাক ও যাবতীয় জিনিসপত্র দিয়ে পরিবারগুলোকে সহায়তা করেছে। ত্রাণের পাশাপাশি তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণেও সহায়তা করেছে। এরই মধ্যে সবগুলো ঘরবাড়ি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। সবকিছু নতুন করে সাজিয়েছেন তারা। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় মাঝিপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারগুলো এখন অনেকটা স্বাবলম্বী।
ক্ষতিগ্রস্ত একেকটি পরিবার চার-পাঁচ লাখ টাকা, নতুন টিন, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী, শাড়ি-লুঙ্গিসহ বিভিন্ন সহায়তা পেয়েছে। এখনও ত্রাণসামগ্রী ও অর্থ সহায়তা পাচ্ছে তারা।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসার বিরোদা রানী রায় বলেন, মাঝিপাড়ার ঘটনা দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে। নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর নির্মাণে ১০০ বান্ডিল টিন দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ত্রাণসামগ্রী ও অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ঘটনাস্থলে এসে প্রতিটি পরিবারকে অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান দুবার ঘটনাস্থলে এসে ত্রাণসামগ্রী ও অর্থ বিতরণ করেছেন। দ্রæত সময়ে বাড়িঘর নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণকাজ তদারকি করেছেন।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, হামলার পরপরই আমরা দ্রুত ক্ষতির পরিমাণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করেছি। ঘটনার পরদিন থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো নির্মাণ করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছি। তিন বেলা রান্না খাবার দেওয়া হয়েছে তাদের। যা এখনও অব্যাহত আছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা আগামী দুই মাস ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তিন বেলা রান্না খাবার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পাঠিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার ওই পল্লিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেছি। তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২৬টি পরিবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০টি পরিবার। ওসব পরিবারকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২৬টি পরিবার তিন লাখ টাকার বেশি এবং কাপড়, শুকনো খাবার পেয়েছে। এ ছাড়া যারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাও লক্ষাধিক টাকাসহ ত্রাণসামগ্রী সহায়তা পেয়েছে।
মাঝিপাড়ার বাসিন্দা নিখিল চন্দ্র বলেন, আগুনে মোর দোকান ঘরটা পুড়ি দিছে। ঘটনার একদিন পর ইউএনও, পিআইও হামার পাড়ার পোড়া-ভাঙা বাড়িগুলো ঠিক করার জন্য মিস্ত্রি দেয়। মুই এখন নতুন ঘরে দোকান করছি।
ক্ষতিগ্রস্ত দেবেন চন্দ্র বলেন, হামার এমপি, স্পিকার টিন আর নগদ টাকা দিছে। পিআইও সেই টিন দিয়া মোর ঘর নতুন করি বানে দিছে। এ জন্য হামরা খুশি। আগুনে মোর দুটা গরু পুড়ি মারা যায়। মোক গরু, নগদ টাকা, শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বল, চাল-ডাল দিছে।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, মাঝিপাড়ার ঘটনার পর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিটি পরিবারকে দুই-তিন লাখ টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও, সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নগদ অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ১৭ অক্টোবর রাতে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের বড় করিমপুরের হিন্দুপাড়ায় হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি এবং সহিংসতার একটিসহ চারটি মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭১ জন।
আনন্দবাজার/শহক