- কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
সম্প্রতি নকল প্রসাধনীর বেশ কয়েকটি কারখানার সন্ধান পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শহর কিংবা শহরের আশেপাশে নির্জন এলাকায় এসব কারখানা গড়ে উঠছে। এসব কারখানায় তৈরি হয় নকল প্রসাধনী। দেশ বা বিদেশের অনেক দামি ব্যান্ড নকল করে এরা বাজারে ছাড়ছে নকল পণ্য। এতে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে নির্দিষ্ট কোম্পানির সুনাম নষ্টের পাশাপাশি প্রতারিত ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন ক্রেতারাও।
গত মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর পবা উপজেলার দিঘির পারিলা গ্রামে নকল প্রসাধনী কারখানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। কারখানাটি থেকে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকার নকল প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন, দুর্গাপুর উপজেলার কালুপাড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৪৮) ও দিঘির পারিলা গ্রামের মেজবাহ উদ্দিন (৪০)। সাইফুল তার ভগ্নিপতি মেজবাহ উদ্দিনের বাড়িতে ‘নন্দিনী হারবাল’ নামে এ নকল কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
স¤প্রতি রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৮টি নকল প্রসাধনী কারখানার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবশেষ পবার অভিযানের বিষয়ে বুধবার সকালে আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক নিজের দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, সবাই ফর্সা হতে চায়। সে কারণে রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে নকল প্রসাধনীর কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। পবার নন্দিনী হারবাল নামে এ কারখানাটিতে পাকিস্তানের গেøারি ও সৌদি আরবের নাইট বিউটি কুইন ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী তৈরি করা হতো। এসব ভেজাল ও নকল প্রসাধনী রাজশাহী থেকে সারাদেশে বাজারজাত করা হতো।
তিনি জানান, এসব মানহীন নকল ও ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার করলে স্কিন ক্যান্সার হয়। তাই এসব কারখানার সন্ধান পেতে ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই সবশেষ কারখানাটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।
চলতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। এ সময় ৩২ লাখ টাকা মূল্যের নকল দেশি ও বিদেশী প্রসাধনী সামগ্রী, মেশিন ও মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিক্যালসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়।
চলতি বছর ২৮ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর একটি গোডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ নকল প্রসাধনী জব্দ করে। একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে এসব নকল প্রসাধনী গুদামজাত করা হতো। সেখান থেকে পরে মহানগরীসহ আশপাশের জেলা-উপজেলায় বাজারজাত করা হতো। এ ঘটনায় নকল প্রসাধনী প্রস্তুতকারককেও আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নকল প্রসাধনীগুলো তৈরি করার পরে রাজশাহী মহানগর ও বাইরের বিভিন্ন বিউটি পার্লার, জেন্টস পার্লার, সেলুন ও কসমেটিক্সের দোকানে সরবারহ করা হয়ে থাকে। এসব নকল পণ্য দেশ ও মানুষের বহুমুখি ক্ষতি করে থাকে। বিদেশী ব্যান্ড নকল করায় দেশ প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে এসব নকল পণ্য বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় আসল কোম্পানি তাদের সুনাম হারাচ্ছে। শুধু তাই না, যেসব ক্রেতা দামি ব্রান্ডের কথা মনে করে এসব পণ্য কিনে থাকেন তারা নানানভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এসব পণ্য ব্যবহারে স্কিন ক্যান্সার হতে পারে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা কোন কিছুর কথা চিন্তা করে না। তারা কিভাবে নিজের পকেট ভারি করা যায় সেই চিন্তায় মত্ত থাকে। আশেপাশে এমন কোন কারখানা গড়ে উঠতে দেখলে যা সন্দেহজনক সেই সব অবস্থা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেছেন।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খাঁন বলেছেন, যারা নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করেন তারা দেশ এবং জাতির শক্র। তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আনন্দবাজার/শহক