বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭০ কোটি টাকার বাস ভাঙ্গারি দরে ২ কোটিতে বিক্রি!

৭০ কোটি টাকার বাস ভাঙ্গারি দরে ২ কোটিতে বিক্রি!

২০ বছর আগে কেনা ৭০ কোটি টাকার বাস ২ কোটি টাকায় বিক্রি করে ভলভো বাসের অধ্যায় শেষ করেছে বিআরটিসি। শুধু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর্থিক মেয়াদের অন্তত ১০ বছর আগেই বাতিলের খাতায় চলে গিয়েছিল বাসগুলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিআরটিসির ঝোঁক সবসময়ই নতুন বাস কেনা এবং তা ইজারা দেয়াতে। ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েও এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যানের দাবি, পুরোনো ধারা ভেঙে বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন তিনি।

২০০১ সালে ৭০ কোটি টাকা খরচ করে সুইডিশ কোম্পানি ভলভো থেকে ৫০টি দোতলা বাস আনে বিআরটিসি। সাধারণত দশ বছর মেয়াদ ধরা হলেও ভলভো বলছে, ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করলে একেকটি বাস ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। অথচ সাধারণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একে একে বাসগুলো অচল হতে থাকে। গত ৮-১০ বছরে একটি বাদে সবগুলো বাসই চলে যায় অকেজোর তালিকায়।

দীর্ঘদিন ডিপোতে পড়ে থাকার পর অবশেষে গত মাসে ৪৯টি বাস ভাঙ্গারি দরে ২ কোটি ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে বিআরটিসি।

বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, যে গাড়িগুলো আর তোলার কোন সুযোগ নেই সেগুলোকে রাখার আর কোন প্রশ্নই আসেনা। আমরা কাঙ্ক্ষিত মূল্য পেয়েছি, আমাদের যে খরচ ছিলো তার চেয়ে বেশি মূল্য পেয়েছি। তাই আমরা বিক্রি করে দিয়েছি।

সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বিআরটিসির বাসের সংখ্যা ১৬শ’। যার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ইজারায় আছে ৩৪টি। চলাচলের অযোগ্য ১০১টি। ভারি মেরামত কাজ চলছে ১৯৮টি বাসের। বিআরটিসি এখন যে আয় ব্যয়ের হিসাব দেখায় তাতে প্রতিষ্ঠানটি এখন লাভে রয়েছে। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকি হচ্ছে বিভিন্ন সময় যে নতুন বাস বহরে যুক্ত হচ্ছে তার দাম ব্যয়ের হিসেবে থাকেনা।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, বাসগুলোর যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। হয়তো কোন কোন ডিপো কোন কোন বাসের ক্ষেত্রে যত্নের ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু আমি আসার পরে যে বিষয়টিতে সর্বোচ্চ জোর দিয়েছি তা হলো, কোন গাড়ি যেন যন্ত্রাংশের অভাবে, তদারকির অভাবে লাইফটাইমের আগে নষ্ট না হয়। এবং লাইফটাইমের পরেও যেন গাড়িগুলো চলতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

বিআরটিসি যে কোন যানবাহন কিনলেই কর অব্যাহতি সুবিধা পায়। অর্থাৎ ব্যক্তি মালিকানার চেয়ে অনেক কম খরচে বাস কিনতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ বাসই সচল থাকে অন্যদের তুলনায় অনেক কম সময়।

আরও পড়ুনঃ  ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়

পরিবহণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক জানান, ভলভো গাড়ি মানুষ কিনে দীর্ঘমেয়াদে আরামদায়ক সার্ভিস দেয়ার জন্য। তা আগেই নষ্ট হয়ে গেল এবং এটার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয়নি। সুতরাং পরের প্রকিউরমেন্টটা আরও বিলাসী ও দ্রুত হবে। এখন এগুলো যত দ্রুত মেইন্টেনেন্সের কাতারে চলে যাবে, প্রকিউরমেন্টা আরও বড় করতে পারবে, এই ধরনের আগ্রহী লোকের সংখ্যা যখন বেশ থাকে, এর পাশে যদি অ্যাকাউন্টিবিলিটি না থাকে, তাহলে যা হবার তাই হচ্ছে।

বিআরটিসি এখন দীর্ঘমেয়াদী ইজারা দেয়ার বিষয়টি থেকে দ্রুত সরে আসবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন