তিস্তা নদীর ধুধু বালুচরে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প আশার সঞ্চার করেছে। শুধুমাত্র এক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র চরে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। ইতোমধ্যে দুর্গম চরে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। পতিত জমিতে আবাদের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে ভাগ্যের চাকা।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার চরে তৈরি হয়েছে রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট। এতে অনেকটাই বদলে গেছে চরের দৃশ্যপট। চরে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় দুইশ শ্রমিক কাজ করছেন। তবে গেল ২০ নভেম্বর হঠাৎ বন্যায় ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের কিছু নির্মাধীন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ও এখন পুরোদমে চলছে।
উপজেলার ভোটমারী তিস্তা নদীর শৈলমারীর চরে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে অভাব-অনটন মানুষের নিত্যসঙ্গী। প্রতিবছর তিস্তা নদী গতিপথ পরিবর্তন করে ভাঙছে শত শত একর আবাদি জমি, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। তিস্তার ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়েছেন হাজারও কৃষক। বর্ষাকালে নৌকায় যাতায়াত কিছুটা সহজ হলেও শীত বা অন্য সময়ে দীর্ঘ দুই থেকে তিন কিলোমিটার বালুপথ হেঁটে আসতে হতো উপজেলা শহরে। এতে সময় লাগত দুই থেকে তিন ঘন্টা। চরে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা থাকলেও নেই লেখাপড়ার উন্নত সুযোগ-সুবিধা। কর্মসংস্থান বলতে চরের জমিতে হালচাষ, নদীতে মাছ ধরা ও চরে গরু-মহিষ-ছাগল পালন করা। নেই চিকিৎসাসেবার কোনো ব্যবস্থাও।
শৈলমারী চরের বাসিন্দা আনারুল হক বলেন, ১২ মাসই চরের মানুষের কষ্ট ছিল। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে আমাদের ভাগ্য খুলছে। চরে রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় খুব সহজে এখন উপজেলায় যেতে পারি। এ প্রকল্পটি আসায় আমাদের অনেক উপকার হয়েছে।
আরও পড়ুন:অতিরিক্ত দামে অকটেন-পেট্রোল বিক্রি করলে শাস্তি : জ্বালানি মন্ত্রণালয়
চরের বাসিন্দা দেলদার মুন্সী, ওয়াহেদুল ইসলাম ও বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার বলেন, এখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। এ প্রকল্পের কারণে স্বপ্নের পাকা রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। তাদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছি। চরে বিদ্যুৎ ও যাতায়াতে সুবিধা হওয়ায় আমাদের অর্থনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছে।
শৈলমারী গ্রামের আকবার আলী বলেন, শুধু চর বলে আগে আমাদের এলাকায় ছেলে বা মেয়ে বিয়ে দিতে চাইতো অনেকে। এখন তা পরির্বতন হয়েছে। চর এলাকায় এখন রাস্তা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। চর এখন শহরে রূপ নিয়েছে।
ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড প্রকল্পের ডিরেক্টর অপারেশন হরিপদ রায় বলেন, খুব দ্রুত এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তিস্তার পানিপ্রবাহে যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় সে জন্য দুটি বেইলি ব্রিজ ও ১৮ কালভার্ট নির্মাণ করেছে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখবে এ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বাজার/এম.আর