কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বট বৃক্ষ। বট শুধু বৃক্ষ নয় বৃক্ষরাজ, বনস্পতি, মহীরুহ যোগ হচ্ছে হারানোর তালিকায়। বাংলা সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সংস্পর্শে মিশে আছে এই বটবৃক্ষ। এক সময় বাংলাদেশের সব অঞ্চলে বটগাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন বিরল প্রায় এ বৃক্ষ।
বাণিজ্যিকভাবে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গাছ রোপণ করলেও বর্তমানে বটগাছ রোপণের তেমন কোন উদ্যোগ আর আমাদের চোখে পড়েনা। একটা সময় ছিল যখন বাড়ির সামনে, জমির ধারে ও খেয়াঘাটগুলোতে বটগাছ থাকত। তখন কোনো ঠিকানা নিশ্চিত করতে বটগাছকেই ব্যবহার করা হতো। বটগাছ ছিল মানুষের মিলন মেলা। বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে একদিকে বট বৃক্ষ অন্যদিকে বাংলার সংস্কৃতি। এখন পরিবারের জীবিত বয়স্ক ব্যক্তিকে বটবৃক্ষের সঙ্গে অমূল্যহীন বলে তুলনা করা হয়।
একসময় গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজার,মেলাও বসতো বটবৃক্ষের নিচে। এমনকি কৃষি শ্রমিকরা এক সময় বিশ্রাম নিত এই বটবৃক্ষের তলায়। প্রতিনিয়ত পুরনো বটগাছগুলো মানুষ কেটে ফেললেও নতুন করে কোনো চারা রোপণ না করায় আর চোখে পড়ছে না প্রকৃতিবান্ধব এই বটগাছ।
এলাকার একদল সচেতন মহল বলেন, বটগাছের ফল আমরা খাই না, অতীতে মানুষের কাছে বৃক্ষের ছায়া অতি লোভনীয় ছিল কিন্তু বর্তমানে রাস্তার উন্নয়ন ও দ্রুতগামী যানবাহন হওয়ায় সেটার প্রয়োজনীয়তাও অনেক কমে গেছে। জীবন জীবিকার সংগ্রামে ছুটতে গিয়ে বাল্যকালে শিখে আসা কিছু বাক্য ভুলতে বসেছি “মানুষ একা বাস করতে পারেনা” তেমনি “আমাদের চার পাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ।
এ গাছের ফল অধিকাংশ পাখির প্রধান খাবার। বটগাছ না থাকলে সেই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পাখির খাদ্য ও বসবাসের সমস্যা তৈরি হবে সেটা কে না জানি। যেমন টিয়া পাখি এসব বড় গাছের মগ ডালের গর্তে বাস করতেন।
আজ টিয়া পাখির মত কিছু পাখি বৈচিত্র্য নিরবে কমে যাচ্ছে, সেটা দেখার সময় কি আমাদের আছে? পাখিরা যে ফসল সহ ফুল ফলের পরাগায়ণ ও বিভিন্ন গাছের বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে যাচ্ছে সেটা আমাদের প্রত্যেকের অজানা নয়। এমনকি বটগাছের আবিষ্কারক হচ্ছে পাখি, ফল খেয়ে মল ত্যাগের মাধ্যমে গাছটি তৈরি হয়। গাছ সাধারণত মানুষেরই নয়, সকল প্রাণির জন্য অক্সিজেন প্রদান করেন।
এ সকল বড় গাছ আবহাওয়া, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, ঝড় ও বজ্রপাত প্রতিরোধসহ বিভিন্নভাবে যে আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত তা সকলেই উপলব্ধি করে থাকি। একটি বটগাছ শুধু গাছ নয়, এক একটি বাস্তুসংস্থান। আর এই বাস্তু সংস্থানের উপর নির্ভর করেই সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল প্রাণি মানুষও টিকে আছে। তাই বাঁচার জন্য এই উদ্যোগ মানুষকেই নিতে হবে।
আনন্দবাজার/শহক