আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনকার তুলনায় আরো খারাপ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা ও লকডাউন কঠোর করার তাগিদ তাদের।
প্রথিতযশা ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক বছরে আমাদের যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে তা কার্যকর নয়। নতুন স্ট্রেইনের কারণে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে। এরইমধ্যে বেশকিছু আন্দোলন ও জনসমাগমের ঘটনা ঘটেছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন ঊর্ধ্বমুখী। আগামী ২০ থেকে ২১ তারিখের দিকে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে’।
একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা।
ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘আমরা যতটুকু ধারণা করতে পারছি তাতে মনে হচ্ছে এখন যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে সেটি আরো দুই থেকে তিন সপ্তাহে বাড়তির দিকে থাকবে। মেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্টের বিপুল জনসমাগমের কারণে সংক্রমণ বাড়ার ফল আমরা আর কিছু দিনের মধ্যেই পাবো। এখন আবার বিভিন্ন ধরণের আন্দোলন হচ্ছে সেসব কারণেও সংক্রমণ বাড়বে। সংক্রমণ বাড়লে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মৃতের সংখ্যাও বেড়ে যাবে’।
সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরার ওপর জোর দিয়ে ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘শুধু মাস্ক পরলেও ৫০% সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মানার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাদের আক্রান্তের ধরণ মৃদু হয়। তাদের অক্সিজেনের প্রয়োজনও হয়না। সে কারণে সামাজিক দূরত্ব মানা না গেলেও মাস্ক পরাটা নিশ্চিত করতেই হবে’।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক ৭ হাজার ২১৩ জনের শরীরে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৫২। অন্যদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা। এর আগে গত বছরের ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৩৮৪।
২৩৭টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ হাজার ৩১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৯৩৫টি। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, ‘সরকার কর্তৃক প্রয়োগ করা সাত দিনের এ নিষেধাজ্ঞা লকডাউনের নীতি ও সংজ্ঞার সাথে মেলে না। এটি একটি অবৈজ্ঞানিক, অপরিকল্পিত এবং অর্থহীন লকডাউন। এটি ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জাতির সাফল্য অর্জনে কোন সহায়তা করবে না’।
ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। লকডাউন মানে হলো হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। আর মানুষের খাবারের জন্য এলাকার ছোট ছোট সবজি বা মাছের দোকান দুই এক ঘণ্টার জন্য খোলা থাকবে। কিন্তু আমাদের তো সেটি হচ্ছে না। সবকিছু খুলে রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর সুফল সরকার বা জনগণ কেউ পাাবেনা’।
আনন্দবাজার/শহক