ঢাকা | সোমবার
১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়, ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউনের সিদ্ধান্তের কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকেই নগরজীবনে একধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আবার রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ইতিমধ্যে কঠোর এই লকডাউন এড়াতে ও কর্মহীন হয়ে আটকা পড়ার ভয়ে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই।

এ ছাড়া লকডাউনে জরুরি খাদ্যবাহী ট্রেন ছাড়া সব প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গত বছরের মতোই লকডাউনে শুধু পণ্যবাহী মালগাড়ি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনে ঠিক যত দিনের জন্য লকডাউন জারি হবে, তত দিনই যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে না।

গত বছর করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ২৫ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। ৬৮ দিন পর ১ জুন থেকে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হয়। বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের মতো এবারও লকডাউনে সব ধরনের যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে। পণ্যবাহী যানে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ থাকবে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে- এ শঙ্কায় শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলের পর রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী টার্মিনালের দিকে মানুষের ঢল নামে। মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায় টিকিটের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। রাত পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল। এরপর রোববার (৪ এপ্রিল) সকাল হতেই বিভিন্ন টার্মিনালে দেখা গেছে একই অবস্থা। ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়।

সারাদিন পর মধ্যরাতেও রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় ছিলো ঘরমুখী মানুষের। লকডাউন ঘোষণার পর ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি কোনটাই মানা হয়নি বাসের মধ্যে কিংবা কাউন্টারে। গ্রামে পাড়ি জমানো মানুষের চাপে সারারাতই যানজট ছিলো ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলোতে।

রাতেও রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের উচড়ে পড়া ছিলো গাবতলী বাস টার্মিনালে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে গাদাগাদি মানুষ, নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। মাস্ক নেই বেশিরভাগ মানুষের মুখে। কাউন্টারগুলোতেও ছিল না কোন জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা। লকডাউন যেন গ্রামে ফেরার উৎসবে পরিণত হয় মানুষের কাছে।

শত চেষ্টা করেও অনেকেই পাননি টিকিট। এক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী বসানোর কথা থাকলেও কোন নিয়মই মানা হয়নি বাসগুলোতে। কোন বাসেও ছিটাতে দেখা যায়নি জীবানুনাশক স্পে। পাশাপাশি আসনে যাত্রী বসানো ছাড়াও দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের।

রাজধানী ছাড়া বাসের চাপে গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ কল্যাণপুর এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে ভিড় ছিল সদরঘাটেও। সন্ধ্যার পর রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের ঢল নামে লঞ্চ টার্মিনালে। তবে ভিড় কম ছিল কমলাপুর স্টেশনে। আসনের অর্ধেক টিকিট দেওয়া হচ্ছে ট্রেনে। বন্ধ রয়েছে স্ট্যান্ডিং টিকিটও। সে কারণে কমলাপুরে যাত্রী বাড়লেও ভিড়ের চাপ তীব্র ছিল না।

বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে ভিড় আর গণপরিবহনের ঠাসা অবস্থা থেকে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন