ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে করোনা সংক্রমণের এক ভয়ংকর সপ্তাহ

দেশে প্রতিদিন করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। গত বছরের জুন-জুলাই মাসে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফার্স্ট ওয়েভ ছিল। সে সময়ও সংক্রমণ এত দ্রুত বাড়েনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এবার সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয় বাড়বে।

দেশে করোনা সংক্রমণের ৫৬ তম সপ্তাহ চলছে। এই সপ্তাহের প্রথম ছয়দিনে (২৮ মার্চ-২ এ্রপ্রিল) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩২,৭৮৮ জন, যা এখন পর্যন্ত এক সপ্তাহের কম সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ সময় প্রতিদিন গড়ে ৪৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের ২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই (সংক্রমণের ১৭ তম সপ্তাহ) পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। সে সময় এক সপ্তাহে ২৫,৭০১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ওই সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তবে নাগরিকদের অনেকের মাঝেই কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই যথাযথ নিয়ম মেনে মাস্ক পরছেন না। আবার কেউ কেউ মাস্ক পরলেও, শারীরিক দূরত্বের ব্যাপারে গাফিলতি সবার।

কোভিড-১৯ এর উদ্বেগজনক সংক্রমণের মধ্যেই গতকাল শুক্রবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৫টি কেন্দ্রে এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । সারা দেশে ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আবেদন করেছিলেন।

এসময় প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিশাল ভিড় দেখা গেছে।

অন্যদিকে, সম্প্রতি বিভিন্ন খাতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও কোভিড নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বাসে অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ যাত্রীরা সমবেত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে করতে রাস্তায় নেমে আসছে, বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখছে। যা তাদের কোভিড আক্রান্তের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণ অনেক কমে গিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণ হার ৩% এর নিচে নেমে এসেছিল। কোভিড ডেডিকেটেড বিভিন্ন হাসপাতালে নন-কোভিড রোগী ভর্তির পরিকল্পনা করছিলো সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে মার্চ মাস থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে। ১০ মার্চ থেকে দিনে এক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হওয়া শুরু হয়, এখন দৈনিক শনাক্ত ৬ হাজার ছাড়িয়েছে।

এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৮৩০ জনের শরীরে। এটিই একদিনে সর্বাধিক শনাক্তের ঘটনা। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪।

অন্যদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ১৫৫।

গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ ও মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অথচ এর আগের দিন বৃহস্পতিবারও সংক্রমণের হার ছিল ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ টিবিএসকে বলেন, ‘মার্চের ১০ তারিখের পর থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে আমাদের হাসপাতালে দিনে ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি থাকত। এখন তা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আমাদের ৩২৯টি সাধারণ বেড ও ২৯টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই। প্রতিদিন রোগী ভর্তির জন্য প্রচুর আবেদন পাচ্ছি। এখন হাসপাতালে সিট বাড়ানোর পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে’।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন