দেশে প্রতি তিন দিনে গড়ে একটি করে সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হয়। প্রতিবছর এই দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদউত্তীর্ণ মানহীন সিলিন্ডারই এসব দুর্ঘটনার আসল কারণ। তদারকির অভাবে বিপজ্জনক এসব সিলিন্ডার দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে পরিবহণসহ বিভিন্ন খাতে। তাই এসব দুর্ঘটনার দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপরই বর্তায় বলে মনে করেন তারা।
গত শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও ব্যক্তিগত পরিকল্পনা ছিলো নিহতদের। স্বপ্ন ছিলো। মুহূর্তেই সব কিছু শেষ। বাস, মাইক্রোবাস আর সিএনজি অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে সাথে সাথেই মারা যান এগারোজন। পরে আরো ছয়জন।
হানিফ পরিবহনের একটি বাস রাজশাহী থেকে ঢাকার দিকে আসছিলো। একই সময় একটি মাইক্রোবাস রাজশাহীর দিকে আসছিল। কাটাখালি এলাকায় দুটি গাড়ির সঙ্গে একটি লেগুনার ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। প্রাথমিক ধারণা তখন মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর এখনও দুর্ঘটনার কারণ বের করতে পারেনি।
বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে আমরা কোন কিছুই পাইনি। যে যানবাহনগুলো দুর্ঘটনায় পড়ে ধ্বংস হয়েছে সেগুলোর কোন নমুনা নেই। আলামত না থাকার কারণে এখনো রিপোর্ট দিতে পারছি না তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। যদি সিলিন্ডারটি পাওয়া যায় তাহলেও কিছু তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, শুধু ২০২০ সালে সিলিন্ডার বিস্ফোরনের ১৩৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে ২টিরও বেশি সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞদের গবেষণা বলছে, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঝুঁকি নিয়ে চলছে গ্যাস চালিত বেশিরভাগ পরিবহণ।
বুয়েট দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বলেন, সাধারণত মেয়াদহীন সিলিন্ডারগুলি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। এগুলো দেখভাল করার কেউ নাই এমনকি পুলিশও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উন্নত দেশেও মানুষ সুযোগ সন্ধানী কিন্তু যারা দায়িত্ব নেন তারা জানেন দায়িত্ব অবহেলার দায়। এই দুর্ঘটনা যদি উন্নত কোন দেশে হতো শুধু চালক না এগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই বিচারের আওতায় আনা হতো।
দেশে সিলিন্ডার ব্যবহারের ছাড়পত্র দেয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিস্ফোরক পরিদপ্তর। আর পরিবহণের ক্ষেত্রে যানবাহনের ফিটনেস নবায়নের সময় অন্যান্য বিষয়ের মতো সিলিন্ডারের মান যাচাইয়ের দায়িত্ব বিআরটিএ’র।
আনন্দবাজার/শহক