মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্বে দুবাই, সিঙ্গাপুর

চট্টগ্রাম বন্দরে সরকার যে বে-টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার দু’টি টার্মিনাল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় নির্মাণ ও পরিচালনা করবে ডিপি ওয়ার্ল্ড ইউএই এবং পিএসএ সিঙ্গাপুর। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া, নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় অপর একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। টার্মিনাল নির্মাণে বিস্তারিত প্রযুক্তিগত ও আর্থিক প্রস্তাব চেয়ে গত সপ্তাহে ডিপি ওয়ার্ল্ড ইউএই ও পিএসএ সিঙ্গাপুরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে  নিশ্চিত করেছেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মো. আবুল বাসার।

প্রস্তাবিত এই বে-টার্মিনালের সঙ্গে রেল, সড়ক, নৌ ও এয়ারপোর্টের সংযোগ সুবিধা থাকবে এবং কমপক্ষে ৫০০০ টিইইউএস ধারণক্ষমতার প্রায় ১২ মিটার ড্রাফট ও ২৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ নোঙর করতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জাহাজভাড়া প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ কমার পাশাপাশি টার্ন এরাউন্ড টাইম কমবে, নির্ধারিত অপারেশন কসটও কমবে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্যের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৩ সালে গৃহীত ৩০ বছর মেয়াদী কৌশলগত মহাপরিকল্পনায় বে-টার্মিনাল নির্মাণের কথা আলোচনায় আসে। তার চার বছর পরে এই টার্মিনাল নির্মাণের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দেখা যায়, বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ও বিনিয়োগ সহায়ক হবে।

আরও পড়ুনঃ  জামালগঞ্জে ত্রাণের বিনিময়ে ধান কাটা

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন হবে। একসঙ্গে প্রায় ৩৫টি জাহাজ এই টার্মিনালে বার্থ করতে পারবে এবং অতিরিক্ত ৫০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব হবে। জাহাজ চলাচলের জন্য জোয়ার-ভাটার অপেক্ষা করতে হবে।

বে-টার্মিনাল নির্মাণে ডিপি ওয়ার্ল্ড ও পিএসএ সিঙ্গাপুর পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি ভারতের আদানি গ্রুপ, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজেটি) এবং দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ওশান এন্ড ফিসারিশ মিনিস্ট্রি বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল। সভায় আন্তর্জাতিক পোর্ট পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করে ডিপি ওয়ার্ল্ড ও পিএসএ সিঙ্গাপুরকে কাজ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পিপিপি জিটুজি পলিসি অনুযায়ী বে-টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করার পর সিঙ্গাপুর সরকার পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এর ভিত্তিতে পিএসএ সিঙ্গাপুরকে বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী হিসেবে মনোনীত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে। তাদেরকে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করার সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এজন্য তারা পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে টার্মিনাল-১ বিষয়ে তাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করা হবে বলে নৌ মন্ত্রণালয় হতে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

জিটুজি পদ্ধতিতে বে-টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য দুবাই সরকারের পক্ষে ডিপি ওয়ার্ল্ড পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এমওইউ স্বাক্ষর করে। ডিপি ওয়ার্ল্ড একটি কনসেপ্ট নোটও পাঠিয়েছে, যেখানে রেল, সড়ক ও বন্দর নিয়ে একটি সমন্বিত ভিত্তিতে প্রস্তাবনা দিয়েছে তারা। দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পেতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার কাছে

এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে বে-টার্মিনালের রেল সংযোগ স্থাপন ও গাজীপুরের ধীরাশ্রমে প্রস্তাবিত আইসিডি নির্মাণ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, চীন ও ডিপি ওয়ার্ল্ড বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করলেও নতুনত্ব এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকায় ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এগিয়ে রেখেছে সরকার। এ প্রকল্প নিয়ে তাদের কাছে বিস্তারিত প্রযুক্তিগত ও আর্থিক প্রস্তাব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।

গত ফেব্রুয়ারিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় নিজস্ব অর্থায়নে ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। মূলত বিদেশি দুই অপারেটর যাতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে টার্মিনাল পরিচালনা করে, সেজন্যই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

এর আগে আরএসজেটির সঙ্গে নৌ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক রয়েছে এবং আরএসজেটির মাধ্যমে কন্টেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণ ও অপারেশন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নেওয়া আছে। কিন্তু সৌদি সরকার এখনও পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এমওইউ সই করেনি।

ভারতের আদানি গ্রুপ ড্রেজিং বাদে শুধু টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছিল। লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)-৩ এর আওতায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার সংস্থান থাকলেও টার্মিনাল নির্মাণে ভারত সরকার এমওইউ সই করেনি।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার ওশান এন্ড ফিসারিজ মিনিস্ট্রি সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব না দিলেও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া এবং বে-টার্মিনালের যে কোন নির্মাণ কাজে সম্পৃক্ত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল ড্রেজিং বা নন রেভিনিউ জেনেরেটিং অবকাঠামো কাজে অর্থায়নের প্রস্তাব করেছে বিশ্বব্যাংক।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় অনাহার মোকাবিলায় 'এসো সবাই' ও 'আমার ফুডে'র সামাজিক উদ্যোগ

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন