ঢাকা | সোমবার
৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবারও প্রকাশ হচ্ছে না বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

এবারও চূড়ান্ত হচ্ছে না বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে দেশের ৪৯১টি উপজেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে ৩৭৯টি কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এখনও কমবেশি ১১০টি যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদন পৌঁছেনি মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া জামুকার অনুমোদনহীন ভাতাপ্রাপ্ত ৩৬ হাজার ৬৮৭ বীর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত ১৮০ উপজেলা প্রতিবেদন পায়নি মন্ত্রণালয়।

ফলে ২৬ মার্চ প্রকাশ করা হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আংশিক তালিকা। সব প্রতিবেদন পাওয়া এবং এ সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করবে সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা যেসব প্রতিবেদন পেয়েছি তার ভিত্তিতে খসড়া তালিকা প্রকাশও করেছি। ২৬ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে তা পূর্ণাঙ্গ তালিকা না হলেও ৯৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকবে। বাকি প্রতিবেদন পাওয়ার পর ও এ সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

জানা গেছে, সারা দেশের নতুন আবেদন করা দেড় লাখ মুক্তিযোদ্ধার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে দেশের ৪৯১টি উপজেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৭৯টি কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এখনো কমবেশি ১১০টি যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদন পৌঁছেনি মন্ত্রণালয়ে।

এছাড়া বেআইনিভাবে ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গেজেটভুক্ত হওয়া তিন হাজার ৭১৯ জনের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) সুপারিশ পাঠিয়েছে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি। ৪৯১টি উপজেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে ৩৭৯টি কমিটির প্রতিবেদন ১১ মার্চ পর্যন্ত জামুকায় জমা হয়েছে। বাকিদের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জামুকায় পাঠাতে বলা হলেও মাত্র ২/৩টি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এছাড়া গত ৭৩তম জামুকার সভায় উপজেলা ও মহানগর কমিটি থেকে গেজেট ও সনদ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা তিন হাজার ৭১৯ জনকে আপিল করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা ১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত আপিল ফরম ইস্যু করা হবে, যা মন্ত্রণালয় ও জামুকার ওয়েবসাইট থেকে সংক্ষুব্ধরা সংগ্রহ করতে পারবেন। ফলে তাদের কারণেও চূড়ান্ত তালিকা করা যাচ্ছে না।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৮। মোট ভাতাভোগী খেতাবপ্রাপ্ত শহিদ, মুক্তিযোদ্ধাসহ দুই লাখ ছয় হাজার। যার মধ্যে সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা এক লাখ ৯২ হাজার। তবে তাদের মধ্যে গত বছর মার্চে চালু হওয়া মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজে এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হয়েছেন এক লাখ ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদের নাম-ঠিকানার ভুলসহ বিভিন্ন কারণে ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এসব ভুল সংশোধনের পর তাদেরও ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তখন বকেয়া ভাতাও পাবেন তারা। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারের আমলে এ পর্যন্ত ছয়বার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরপরও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি সারাদেশে ৪৯১টি উপজেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করে সরকার।

যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দেওয়া ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৬ মার্চের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন