ঢাকা | মঙ্গলবার
৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাপাসিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘জামাল আহমেদ পাঠাগার’

‘‘ পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’’ এই শ্লোগান কে সামনে রেখে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খিরাটী বাজারের দক্ষিণ পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে মনোরম পরিবেশ ও নান্দনিক ডিজাইনে সাজানো ‘জামাল আহমেদ পাঠাগার’।

খিরাটী গ্রামের কৃতি সন্তান ও দ্যা রয়েল পাবলিসার্স’র স্বত্বাধীকারী জামাল উদ্দিন আহমেদ তার জনকল্যাণমূলক কাজের অংশ হিসেবে এবং মানুষের মাঝে পাঠ্যভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘জামাল আহমেদ পাঠাগার’। আর এই পাঠাগারটি এখন বইপ্রেমী পাঠকদের মাঝে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে।

তিনি বেসরকারী একটি ইউনির্ভাসিটি থেকে এমবিএ করার পর নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন বই প্রকাশনায়। আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমেই গড়ে তোলেন দ্যা রয়েল পাবলিসার্স নামক প্রকাশনী। ছোট বেলা থেকেই তার ঝুঁক ছিলো বই পড়ার প্রতি। বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা থেকেই পথের ধারে তিনি গড়ে তোলেন এ পাঠাগার। এলাকার যুব সমাজ তথা পথচারী সাধারণ মানুষকে বই পড়ায় উদ্ধুদ্ধ করে তুলতে ও অনুপ্রেরণা দিতে তার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, অনেক মানুষ আছেন যারা অবসর সময়ে বই পড়তে ভালোবাসেন। কিন্তু নিয়মিত বই কিনে পড়ার সামর্থ নেই। আবার সামর্থ থাকলেও পাঠাগারে যাওয়া,পাঠাগারের সদস্য হওয়া, নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার ঝামেলায় আর হয়ে ওঠে না। তাই ঝামেলা এড়িয়ে খুব সহজে ও বিনা মূল্যে তাদের বই পড়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় এই পাঠাগার। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর তারিখে এই পাঠাগারটি সর্ব সাধারণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ইনশাল্লাহ যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাহলে দেশের গন্যমাণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে বড় পরিসরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম দিকে অনেকেই নিরুৎসাহিত করলেও অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর আকাঙ্খা দৃঢ় ও মজবুত থাকায় এখন ক্রমে ক্রমেই পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে। পাঠাগারটিতে শুরুতে ১২৮০টি শিরোনামের ২৫০০ কপি বই সংরক্ষণ করা হয়েছিলো। আর এখন আল্লাহর রহমতে ৩ হাজারেরও অধিক কপি বই সংরক্ষণ আছে। পর্যায়ক্রমে এটিতে ৫ হাজারেরও কপি বই সংরক্ষণ করা হবে। প্রথমে আমার নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই ও ব্যক্তিগতভাবে ক্রয়করা বই মিলে ১ হাজার ৫শত কপি বই এবং দেশের কতকজন স্বনামধন্য প্রকাশকরা মিলে আরো ১ হাজার বই অনুদান দিয়েছেন।

জামাল উদ্দি আহমেদ আরো বলেন, গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসনের সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি এমপি আমার এই পাঠাগারের কথা শুনে খুবই খুঁশি হয়েছেন। সেই পাঠাগারে তিনি কিছু সংখ্যক বই অনুদান হিসেবে দেওয়ার জন্য সম্মতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও দেশের স্বনামধন্য লেখক, উপমহাদেশের প্রখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও প্রকাশক ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান তাঁর নিজের লেখা বই থেকে শুরু করে প্রায় ২০টিরও বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান হিসেবে বই প্রদান করা হয়েছে।

‘জামাল আহমেদ পাঠাগার’টিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের বই যেমন- ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই, গবেষণামূলক বই, বিজ্ঞানধর্মী, সাইন্স ফিকশন, চিকিৎসা বিষয়ক বই, বিভিন্ন গুনীজনদের আত্মজীবনীমূলক বই, গল্প,উপন্যাস,কবিতা,কিশোর গল্প, ধর্মীয় পুস্তক, চিরায়ত সাহিত্য ও ভারতীয় বাংলা বই এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকের ইংরেজী ভার্সন বইসহ নানা ধরণের বই।

পাঠাগারটি চালুর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিজ উপজেলা ও পাশ^বর্তী উপজেলায় মনে হয় ভালো মানের কোন পাঠাগার নেই। আর আমি যেহেতু বই প্রকাশনার সাথে জড়িত ও বিভিন্ন ধরণের সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত তাই এলাকার উন্নয়ন ও এলাকার যুব সমাজকে মরণব্যাধী নেশার ছোবল থেকে উন্নত জাতি হিসেবে তৈরী করার জন্য ও পাশাপাশি পাঠ্যাভ্যাস যাতে যুব সমাজের মধ্যে গড়ে তোলা যায় এই চিন্তা থেকেই মূলত পাঠাগারটি স্থাপন করা। ইতোমধ্যে পাঠাগারটি জেলা পাবলিক লাইব্রেরী থেকে অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। পাঠাগারটি চালুর পর এত দ্রুত মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে তা সত্যিই অভাবনীয়। পাঠাগারটি যাতে করে প্রতিষ্ঠিত হয় ও মানুষের উপকারে আসে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করা হচ্ছে।

এ প্রচেষ্টার প্রশংসা করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহীনুর আলম সেলিম বলেন, এই উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। এটা অত্যন্ত ভালো মানের কাজ। এলাকার যুব সমাজ থেকে শুরু করে সবাই এখান থেকে বই এনে পড়ে উপকৃত হবে। আর মরণব্যাধী নেশার ছোবল থেকে তারা পাঠ্যাভ্যাাসের মাধ্যমে আস্তে আস্তে আলোর পথে ধাবিত হবে। আশা করি প্রতিষ্ঠানটি বইপ্রেমী পিপাসার্ত পাঠকের তৃষ্ণা মিটিয়ে মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমি এই পাঠাগারের উজ্জ¦ল ভবিষ্যত কামনা করছি।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন