গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় বোরো ধানে ক্ষতিকারক পোকা দমনে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা পার্চিং পদ্ধতি। দিন দিন এ পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে কৃষকরা এ পদ্ধতির প্রতি ঝুকছেন। তারই ধারাবাহিকতায় কাপাসিয়ায় পার্চিং উৎসব পালিত হয়েছে।
গত সোমবার (১৫ মার্চ) উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে উদ্ধুদ্ধকরণের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে ব্যতীত ধানের বিভিন্ন পোকা দমনের জন্য জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা পার্চিং পদ্ধতির উৎসব সকালে পালিত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার বশাকের সভাপতিত্বে ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সৈয়দ শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় উপজেলার রাওনাট গ্রামে পার্চিং উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মাঠ পর্যায়ে পার্চিং উৎসব পালনে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আবিদা মানসুরা, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান, রাওনাট বকের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোসাঃ হামিদা বানু ও স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলার রাওনাট গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে আমরা আগে কীটনাশক ব্যবহার করতাম, এখন কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্ষেতে গাছের ডাল বসিয়ে দেই, সেখানে পাখি বসে ধানের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে,তাই আমাদের এখন কীটনাশক খুবই কম লাগে। কারণ কীটনাশক দ্রুত কাজ করে আর পার্চিং পদ্ধতি ধীরে ধীরে কাজ করে।
এ বিষয়ে রাওনাট বকের উপ-সহকারী কর্মকর্তা হামিদা বানু বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা কৃষকদেরকে নিয়মিত পার্চিং ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। এতে করে যেমন আর্থিক লাভবান হওয়া যায় তেমনি পরিশ্রমও কম হবে।
কৃষকদের মাঝে পাচিং পদ্ধতির জনপ্রিয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার বশাক জানান, একদিকে যেমন বিষমুক্ত পদ্ধতিতে পোকা দমন হচ্ছে, অন্যদিকে রক্ষা পাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং লাভবান হচ্ছে কৃষক। এছাড়া অতিরিক্ত কীটনাশক জমিতে প্রয়োগের ফলে একদিকে ফসলের মান নষ্ট হয় অন্যদিকে কীটনাশক বায়ুমন্ডলে মিশে গিয়ে মানুষ, গাছপালা, পশু-পাখিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। আরো বেশি ক্ষতি করে কীটনাশক মিশ্রিত পানি নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরে মিশে পানি দূষন ছাড়াও পানিতে বসবাসরত মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী ও জলজ উদ্ভিদের ব্যাপক ক্ষতি করে।
উপজেলায় কৃষকরা পোকা দমনে যখন কীটনাশক ব্যবহারে অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়েছে, তখন পরিবেশ রক্ষা ও কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বোরো ধানের ক্ষেতে চলছে ক্ষতিকারক পোকা দমনে জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা পার্চিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কৃষকরাও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ক্ষেতে গাছের ডাল পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে করে পাখি ধানের ক্ষতিকর পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলায় কৃষকদের বাড়তি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। ফলে বোরো উৎপাদনে খরচ কম হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার প্রতিটি বøক যেন কীটনাশক ব্যতিত পাচিং পদ্ধতির আওতায় চলে আসে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে উপজেলার বরুন গ্রাম প্রায় শতভাগ পার্চিং পদ্ধতির আওতায় চলে এসেছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো বøক এই জনপ্রিয় পদ্ধতির আওতায় চলে আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।
আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ