ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালের সাক্ষী শিব মন্দিরের বটবৃক্ষ

প্রায় শত পেরিয়ে নিজের রূপ যৌবন বিলিয়ে দিয়ে বার্ধক্যর দারপ্রান্তে কালের ভ্রু-কুটি উপক্ষো করে লাখো পথিককে শীতল ছায়া দিয়ে আজো দন্ডায়মান হয়ে আছে সাপাহার উপজেলার মানিকুড়া গ্রামের বটবৃক্ষটি। এই বটবৃক্ষে জড়ানো শিব মন্দিরটির রয়েছে অনন্য এক রহস্য। যা বলতে পারেনা এলাকার অনেক বয়োবৃদ্ধরাও। রাস্তার পাশে ছড়িয়ে পড়েছে গাছটির বিশাল শাখা-প্রশাখা। শিকড়-বাকড়ে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। প্রায় ১শ’ বছরের বট গাছটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে তার স্ব মহিমায়। যেন বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে এসে ক্লান্তি নিয়ে পথিকের প্রান জুড়ানোর এক প্রতিজ্ঞা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিব মন্দিরটি ঘিরে রহস্যেঘেরা নানা কাহিনী বংশপরম্পরায় চলে আসছে। এই শিবমন্দিরটি প্রায় হাজার বছর ধরে ইতিহাস আঁকড়ে ধরে এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এই বটবৃক্ষটির চারিপাশে প্রতিবছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যথাক্রমে শিব, বাসরী, কালী, বাসন্তী ও বাসরী পূজা হয়ে থাকে এই মন্দিরে। এছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তিতে এ মন্দিরের চারিপাশে বসে মেলা। প্রতিবছর বিভিন্ন এলাকা হতে পূজা অর্চনা করতে আসেন ধর্মভীরু হিন্দুরা। দেখতে আসেন দূরদূরান্তের অনেক পর্যটকরা। গাছ ও মন্দিরের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন ইতিহাস অনুসন্ধানীরা। এসব বিবেচনায় দাবি উঠেছে মন্দিরটিকে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকিয়ে রাখার। এই মন্দিরটি একটি মূল্যবান প্রত্নসম্পদ হিসেবেও রক্ষণাবেক্ষণের দাবি রয়েছে এলাকার সচেতন মহলের।

স্থানীয়রা বলছেন, মন্দিরটির ভিতর দুটি কষ্টিপাথরের প্রতিমা রয়েছিলো যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চুরি হয়ে যায়। এছাড়া সাদৃশ্যপূর্ণ লোহার একটি দরজা রয়েছিলো যা সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে । বর্তমানে মন্দিরটির ভিতরে ৪টি লোহার কড়া ও ৪ টি লোহার শিকল প্রত্নতত্বের ইতিহাস বহন করছে।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক দুর্লভ তথ্য অনুসন্ধানে গবেষকদের জন্য মন্দিরটি মূল্যবান উপাদান হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতনরা। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় মন্দির সহ গাছটি ঘিরে পূজা-অর্চনা করে আসছে দীর্ঘদিন হতে। গাছে জড়ানো মন্দিরটি ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা স্থায়ীভাবে উপাসনালয় বানিয়েছে। মন্দিরে জড়ানো গাছটির ঝুলন্ত লতা চারদিকে নেমে বেশ কয়েকটি আলাদা গাছের সৃষ্টি হয়েছে।

এ মন্দিরটি প্রত্নত্বকালের ইতিহাস বহন করছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় শিক্ষিতমহল। এ মন্দিরের ভিতরে যে উপাদান গুলো রয়েছে তা নিঃসন্দেহে ইতিহাস ঐতিহ্যর একটি নিদর্শণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে যা প্রায় ৫/৭শ বছরের পুরনো বলে দাবী করছেন স্থানীয়রা।

বর্তমান সময়ে এই মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ কমিটি থাকলেও তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। যার ফলে এই মন্দিরটিতে বড় আকারের ফাটল ধরেছে। গাছটির লতা দিয়ে বেষ্টিত না থাকলে অনেক আগেই মন্দিরটি ভেঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বলে ধারণা করছেন এলাবাসীরা। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট মন্দিরটির সংস্কারের দাবী সহ মন্দিরের পুরনো জিনিসগুলো সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আনন্দবাজার/শাহী/নাহিদ

সংবাদটি শেয়ার করুন