ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা মহামারিতে ঢাকার বাইরের ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে

করোনা মহামারির কারণে জেলা পর্যায়ে ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। পরিবারের ভরণপোষণের খরচ জোগাড় করতে; ঋণ করে চলতে হয়েছে ৩৯.৫ শতাংশ পরিবারকে। সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং একশনএইড বাংলাদেশের যৌথভাবে পরিচালিত একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠান দুটি।

তথ্য সংগ্রহের জন্য দেশের চার অঞ্চলের চারটি জেলা কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও বরগুনায় জরিপ পরিচালনা করেছে প্রতিষ্ঠান দুটি। এসব জেলার ১ হজার ৫৪১টি পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলে এই জরিপে তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা হয়। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিচালিত এ জরিপে ১৫-৩৫ বছর বয়সী যুব জনগোষ্ঠী অংশ নেয়।

‘প্যান্ডেমিক অ্যান্ড ইয়ুথ ইন বাংলাদেশ: সার্ভে ফাইন্ডিংস ফ্রম সিলেক্টেড ডিস্ট্রিক্টস’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ও সানেমের গবেষণা ফেলো মাহতাব উদ্দিন বলেন, “২০১৯ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের নভেম্বরে জরিপকৃত চারটি জেলায় মজুরি বা বেতনভুক্তদের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের আয় কমেছে। আয় বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ মানুষের।”

জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করে তিনি বলেন, “চাকরীজীবিদের আয় কমার পাশাপাশি মুনাফা কমাসহ বড় লোকসানের মুখে পড়েছে স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিতরা। বিভিন্ন স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের মধ্যে ৮২ শতাংশের এ সময়ে মুনাফা কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশের। এই চারটি জেলায় মহামারির সময় ব্যবসা বা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হয়েছে স্ব-উদ্যোগে পরিচালিত ৩১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের।”

অন্যদিকে কম বেতন দেওয়া, বেতন কেটে রাখা ও চাকরি চলে যাওয়ায় চাকরি পরিবর্তন করেছে ৪.৫২ শতাংশ ব্যক্তি। আয় ও মুনাফা কমে যাওয়া এসব মানুষদের বড় অংশ দারিদ্র্যতার কবলে পড়েছে বলে মনে করছেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষদের জন্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা আরও বাড়াতে হবে। উদ্ভাবনী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পরে এর জন্য তাদের টার্গেট করে পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদেরও প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ।

ব্যক্তি পর্যায়ে আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি, করোনার মধ্যেও গ্রামের একটি বড় জনসংখ্যা স্বাস্থ্য সেবার বাইরে ছিল বলে জরিপে উঠে আসে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সেবা পায়নি ৬৩.৮৩ শতাংশ পরিবার। আর ৪৯.১৫ শতাংশ নারী যৌন নিপীড়ন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের বয়স ছিল ১৫-৩৫ বছর । এরমধ্যে গ্রামাঞ্চলের মানুষ ছিলেন ৮৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলের ছিলেন ১৫ শতাংশ, যার ৮১ শতাংশ ছিল বিবাহিত।

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সানজিদা আক্তার বলেন, “করোনা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে এখন মানসিক স্বাস্থ্যে জোর দিতে হবে। আমাদের যে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো আছে, সেখানে এ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।”

স্কুল, কলেজ বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করায় গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বড় অংশ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বলে উঠে এসেছে ওই জরিপে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, “সরকার অনেকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, কিন্তু শিক্ষা কেন্দ্রিক কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ নেই। শিক্ষা কেন্দ্রিক প্রণোদনা প্যাকেজও দরকার ছিল। তরুণ জনগোষ্ঠীর অনেকেই এখন শিক্ষকতা করছেন।”

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৭৯.২৪ শতাংশ পরিবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে আসে। পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয় কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ৪২.০৭ শতাংশ পরিবার। এছাড়া বন্যা, নদীভাঙ্গন ও ভূমিধসের কারনে ২০ শতাংশ পরিবার আর্থিক অনটনে পড়েছে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাফ কবির বলেন, “সরকার অনেক প্রণোদনা দিয়েছে, কিন্তু যুবকদের জন্য আলাদাভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়নি। এখন যুবকদের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণের উপর জোর দিতে হবে।”

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন