গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। ঠিক তার মধ্যে দেখার মত উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল মোঘল আমলে নির্মিত সুলতানপুর দরগা পাড়া শাহী মসজিদ।সেখানকার স্থানীয় মানুষদের ধারণা আল্লাহর অশেষ কুদরতে অলৌকিকভাবে এই মসজিদটি মাটি ভেদ করে উঠেছিল। আর এটিকে অনেকে গায়েবি মসজিদ বলে।
প্রতি শুক্রবার মুসলিম ধর্মের লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষের সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে মসজিদ ও তার আশপাশ এলাকা।গাজীপুর জেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার লোকজন বাস, সিএনজি, মাইক্রোবাস ও রিকশাসহ শতাধিক যানবাহন দিয়ে এখানে এসে ভিড় জমায়। মনের বাসনা পূরণ করার জন্য মানুতের উদ্দেশ্যে কারো কারো হাতে থাকে হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া, গরু ও নগদ টাকা এমনকি স্বর্ণের গহনাও পর্যন্ত। দেখা এবং মানত পূরণের লক্ষ্যে শাহী মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ।
মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী ৬শত বছরের পুরনো শাহী মসজিদটি জেলার কাপাসিয়া উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে টোকা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে অবস্থিত। এটি টোক সুলতানপুর দরগাপাড়া শাহী মসজিদ নামে সমধিক পরিচিতি।
তবে মানুষের মুখে একটা কথাই বেশি প্রচলিত যে, এটা মানুষের তৈরি কোন মসজিদ নয়! আল্লাহর অশেষ কুদরতে অলৌকিকভাবে মাটি ভেদ করে নিজ থেকে গড়ে উঠেছে। মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়ে বিভিন্ন ধরনের মানত করে। আর এই মানতকে কেন্দ্র করেই অনেকে টাকা-পয়সা, হাঁস -মুরগি, গরু -ছাগল- ভেড়া এমনকি স্বর্ণের গহনা ও পর্যন্ত দান করে থাকে এই মসজিদে। অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, খাস নিয়তে এই মসজিদে নামায পড়ে আল্লাহর নিকট যা চায় তার মনের বাসনা পূর্ণ করেন বলে অনেক বিশ্বাস করেন।
এদিকে সপ্তাহে একদিন প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন জেলা-উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন নামাজ আদায় করতে আসেন। প্রতি শুক্রবারে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার লোকের সমাগম ঘটে এই মসজিদে। তবে এ মসজিদটি কবে নির্মাণ করা হয়েছিল তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কিন্তু ধারণা করা হয় যে, মুঘল আমলে এটি নির্মিত হয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্য মতে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৩৬০ জন আউলিয়া এসেছিল। তার মধ্যে ১৩১ তম আউলিয়া ছিলেন শাহ সুলতান। যার নাম অনুসারে এই স্থানটির নাম করণ করা হয় সুলতানপুর।
অন্যদিকে সুলতান আকবরের শাসনামলে ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধ সংঘটিতকালে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। মসজিদের মূল স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হয়েছিল সুরকি ও ইটের সংমিশ্রণে। যেখানে গম্বুজের মধ্যে খোদাই করে অস্পষ্ট ভাবে লেখা আছে ১৩৪৬। পরবর্তীকালে ১৯৮৭ সালে মসজিদটির সম্প্রসারণ করা হয়।
গত শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি )নামাজ পড়তে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন আর প্রাচীন সৌন্দর্য নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রাচীন নিদর্শনের মূল গম্বুজটি। তবে মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে গণকবর। যেখানে অসহায় মৃত মানুষদের কবর দেওয়া হয়। এছাড়াও সেখানে রয়েছে সুলতানিয়া হাফিজিয়া এতিমখানা নামে একটি মাদ্রাসা। যেখানে বর্তমানে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে প্রদান করছে। এদিকে মসজিদের মূল স্ট্রাকচারের ভেতর শতাধিক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারলেও সম্পূর্ণ মসজিদটিতে একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে।
গত শুক্রবার কামারগাঁও গ্রাম থেকে নামাজ পড়তে আসা কয়েকজনের মধ্যে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম নাঈমের। তিনি বলেন প্রায় প্রতি শুক্রবারে আমি মসজিদে নামাজ পরতে আসি। এই মসজিদে নামাজ পড়লে অন্যরকম একটা মজা পাওয়া যায়।
এদিকে মসজিদের মোতাওয়াল্লী মোঃ নুরুল ইসলামের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই মসজিদটি ৬শ বছরের পুরনো। প্রতি সপ্তাহে মসজিদে দান হওয়া লক্ষাধিক টাকা থেকে মসজিদের উন্নয়ন, এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভরণ-পোষণ, মিনার নির্মাণ, পাঁচতলায় নির্মিত কিতাব ভবনের কাজে ব্যবহার করা হয়। সেইসাথে প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী ইসলামী মহা-সম্মেলনের আয়োজন করা হয় এখানে।
আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ