শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে বসন্ত মাসকে ঘিরে ব্যস্ত ফুল ব্যবসায়ীরা

বাংলা মাঘ মাস শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় উৎসবের নানা রকম মাত্রা। আর ঠিক তখনি প্রকৃতি দিতে থাকে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা। সেই বসন্তকে বরণ করার জন্য চাই রঙিন ফুল। বসন্তের দিনে প্রিয়জনের হাতে একটি টুকটুকে লাল গোলাপ দেওয়াও তো চাইই! তাই সারা বছর জুড়েই থাকে ফুলের চাহিদা। কারণ বাঙ্গালী জাতির থাকে ১২ মাসে ১৩ পার্বন!

গত রোবরার (১৪ ফেব্রæয়ারি) পালিত হলো পয়লা ফাল্গুন ও বিশ^ ভালোবাসা দিবস। আসছে ৮ ফাল্গুন একুশে ফেব্রæয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ^ ভালোবাসা দিবসেও যেমন দরকার রঙিন ফুল, ঠিক তেমনি মাতৃভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গকৃত ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দরকার প্রচুর ফুল। এদিকে এতোসব ফুলের চাহিদা মাফিক যোগান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাজীপুরের ফুল ব্যবসায়ীরা। বসন্ত মাসের বিভিন্ন উৎসব ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে ১০ লাখ টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গতবছরের তুলনায় ফুলের দাম একটু বেশি। গাজীপুর জেলা শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ির কাছে রাজবাড়ির ঢাল নামক স্থানে গড়ে উঠেছে কতগুলো ফুলের দোকান। এদিকে দোকানগুলো সাজানো হয়েছে বাহারী সব ফুল দিয়ে। এসব ফুল গুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, গেলোডিলাক্স, জার্বেরা, চন্দ্রমল্লিকা,গাঁদা ও জীবসি। তবে গত রোববার ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবে বেশিই চাহিদা ছিলো লাল গোলাপের।

জাতীয় বিভিন্ন দিবস,সামাজিক,রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যে কোন প্রয়োজনে ফুল কিনতে ভীড় জমে এই ফুলের দোকান গুলোতে। শুধুমাত্র গাজীপুর শহর নয় ,জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও এখানে আসে ফুল কিনতে।

আরও পড়ুনঃ  কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

এদিকে দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারিতে এই ফুলের দোকানগুলো অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে উঠেছিলো। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুল বিক্রির পরিমাণটা একটু বেশি। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের পর থেকে অনেকটা জমজমাট হয়ে উঠেছে ফুলের দোকানগুলো। তাতে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে ফুল ব্যবসায়ীদের মুখে। আর এখন ফেব্রুয়ারি মাস সেই সাথে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন।

শনিবার (২০ ফেব্রæয়ারি) সরেজমিনে জেলা শহরের রাজবাড়ির ঢালে গিয়ে দেখা যায়, ফুলের দোকান গুলোতে প্রচুর ভীড় লেগে আছে। দোকানের কর্মচারীরা ছাড়াও দোকানের মালিকরাও তোড়া সাজাতে ভীষণ ব্যস্ত। আগাম অর্ডার নিচ্ছেন দোকান মালিকরা। লোকজন যেভাবে চান, ঠিক সে ভাবেই বানিয়ে দেয়া হচ্ছে । কেউ রেডিম্যাট ফুলের তোড়া কিনছেন,আবার কেউবা অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে গাঁদা,গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ হরেক রকমের ফুল দিয়ে বানানো হচ্ছে সৌন্দর্যমন্ডিত ফুলের তোড়া।

গাজীপুর ফুল মার্কেটের ফুল ব্যবসায়ী গাজীপুর গার্ডেনের মালিক পারভেজ বলেন, এখানে প্রায় ৭টি দোকান আছে এক সারিতে। গেল ভালোবাসা দিবসে ফুলের তোড়া ও বিভিন্ন ফুল পাইকারী ও খুচরা বিক্রি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিটি দেশি গোলাপের দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, জারবেরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৩০ টাকা, রজনীগন্ধা ১৫-২০ টাকা, জুঁই ফুলের মালা ৫০ টাকা, গাঁদা ফুলের মালা ২০-৩০ টাকা, লিলি ১৮০-২০০ টাকা, থাই-চায়না ও ইন্ডিয়ান গোলাপ ১০০-১২০ টাকা, অর্কিড ৮০ টাকা, কিসিমসিমা মিম ১৫০-২০০ ও জিপসী ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে তোড়ার ডিজাইন ভেদে হয় মূল্য। একেক রকমের ডিজাইনের তোড়ার দাম হয় একেক রকমের। তবে এক হাজার থেকে শুরু করে আটশ, সাতশ এমনকি পাঁচশ টাকায়ও ফুলের তোড়া বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ আগেই অর্ডার দিয়ে রেখেছে, আবার কেউ কেউ সকালে এসে, আবার কেউবা বিকেলে এসে অর্ডার করছে। তার সাথে সাথেই চলছে তোড়া তৈরী ও বিক্রি। তিনি আরো বলেন, আমি প্রায় ২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী।

আরও পড়ুনঃ  বসন্তের ভালবাসা

অর্কিড ফ্লাওয়ার হাউসের ফুল দোকানদার মোঃ রুবেল চৌধুরী এই প্রতিবেদককে জানান, এবছর মহামারি করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় আশা জাগিয়েছে,তাই আগের বছরের তুলনায় এবার ফুল বিক্রির পরিমাণ একটু বেশি। গেল ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রæয়ারি নিয়ে আমরা ভীষণ আশাবাদী। আমি প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো।

রুবেল চৌধুরী আরো বলেন,৫৫ হাজার টাকার ফুল ঢাকার শাহবাগ থেকে কিনে এনেছি। তোড়া বানিয়ে বিক্রি করার জন্য। তবে আমি আশাবাদী সকল খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা হলেও লাভ থাকবে। এদিকে গেল ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি দুই মিলিয়ে ফুল বসন্তের এই মাসে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

এদিকে অন্যান্য ফুল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেকটি ফুল ব্যবসায়ীরা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। ফুলের তোড়া কিনতে আসা এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার সংগঠন এবং অন্যদের জন্য ৩টি ফুলের তোড়া কিনেছেন। তবে আগের বছরের তুলনায় এবার দাম একটু বেশি।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন