ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীতে চলছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তার মধ্যে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, সিঙ্গাপুর প্রজেক্ট, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, ক্লাইমেট প্রকল্প সহ বড় বড় প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান হলে ও শুরু হয় নি মহেশখালীর গণ মানুষের দাবি গ্যাস লাইন সংযোগ। সরকারি বেসরকারিভাবে কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে মহেশখালীর ৭ লক্ষ মানুষসহ কক্সবাজারের ২৩ লক্ষ মানুষ। অথচ মহেশখালীর ভূমি কেটে এলএনজি গ্যাস সংযোগ মহেশখালী-চট্টগ্রামের আনোয়ারা হয়ে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হয়েছে।
সারাদেশে গ্যাস সংকট নিরসনে কক্সবাজারের মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইনটি চালু হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জিটিসিএল কোম্পানি কর্তৃক মহেশখালী-আনোয়ারা হচ্ছে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) লাইন।
মহেশখালীর সোনাদিয়ার জিরো পয়েন্টে (কালাদিয়া চর) এলএনজি ভাসমান টার্মিনাল এটার মূল স্থাপন হলে ও হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা (ধলঘাটা) এলাকায় এর স্টেশন এখান থেকে ফসলি জমির মাটি কেটে পাইপ লাইন দিয়ে কালামারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা মেইন লাইনের ভাল্ব স্টেশন হয়। উত্তর নলবিলা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে দু’,লাইন দিয়ে (৬০০+৫০০=১১০০) মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেকুয়া হয়ে আনোয়ারা যাবে। মহেশখালীতে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য দুটি পাইপ লাইন প্রকল্প কাজ করেছে এবং ৮৫.৬৫ একক ভূমি অধিগ্রহণ ও ১৪৯.৬৫ একক ভূমি দখল করা হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন মূল ভূখন্ডের মালিকরা প্রথমে হতাশাগ্রস্থ হলে ও জমির অধিকরণের টাকা পেয়ে তারা খুশি হয়েছেন। বর্তমানে জিটিসিএল কোম্পানি কর্তৃক অধিগ্রহণের জমি গুলোতে ক্ষতিগ্রস্থ পান-লবণ চাষীরা কাজ করতে পারছে। কিন্তু কিছু জায়গায় সমস্যার কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে কৃষকরা কাজ করতে পারতেছেন না। অন্য দিকে কালামারছড়া এলাকার জমির মালিকগুলো নায্যমূল্যে না পাওয়ায় হতাশায় প্রকাশ করছেন।
স্থানীয় জমির মালিকরা জানান, মহেশখালী-আনোয়ার গ্যাসলাইনের কারণে তারা প্রথমে চিন্তিত থাকলে ও বর্তমানে স্বস্তি পাচ্ছে। কিন্তু কালামারছড়ার উত্তর নলবিলা এলাকায় প্রথমে জমি মালিকদের না জানিয়ে গ্যাসলাইনের কাজ শুরু করাটা অমানবিক মনে করছেন এবং উক্ত প্রকল্পে স্থানীয়দের চাকরির ব্যবস্থা সহ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ও দাবি জানান।
এই বিষয়ে হোয়ানক ইউনিয়নের পানচাষী সিরাজুল হক জানান, গ্যাসলাইনের জমি অধিগ্রহণের পরও পানের বরজ করতে পেরে সে অত্যন্ত খুশি। অন্যদিকে যে কোন দিন উচ্ছেদ আতঙ্গ হবার শঙ্কাসহ অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা তোলার সময় দালাল দ্বারা হয়রানির কথা বলেন।
এই বিষয়ে স্থানীয় জসিম ও রুবেল বলেন, গ্যাসলাইন প্রকল্পে স্থানীয়দের চাকরির ব্যবস্থার করা হউক ।
সাজু আকতার নামে বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত একজন মহিলা বলেন, গ্যাসলাইনের কারণে তাদের ক্ষতি হয়েছে,তাদের অনেক গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। সে নায্যমূল্যে না পাওয়ায় হতাশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর নলবিলার একজন বলেন, স্থানীয়দের চাকরি দেওয়া হচ্ছে না অল্প সংখ্যক মানুষের চাকরি হইছে। এমনকি দৈনিক যে রাজমিস্ত্রী গুলো কাজ করছে এইগুলো পর্যন্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাহির থেকে আনা হচ্ছে। তিনি স্থানীয়দের চাকরিসহ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দাবি জানান।
কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মোহাম্মদ শাহ জাহান বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষের জমির উপর দিয়ে গ্যাসের লাইন যাচ্ছে। আমাদের নায্যমূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হউক।
এই বিষয়ে আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, আমাদের বুকের উপর দিয়ে গ্যাস যাবে আমরা পাব না এমন হতে পারে না। গ্যাস সংযোগ পাওয়া আমাদের মৌলিক অধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার।
মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শরীফ বাদশা বলেন, মহেশখালীতে নায্যমূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া আমাদের দাবি। যেহেতু মহেশখালী উপর দিয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের নায্যমূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য আমি বারবার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এই বিষয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, যেহেতু গ্যাসটা মহেশখালী দিয়ে যাচ্ছে তাই মহেশখালীতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন গ্যাসটা জাতীয় গ্রেডে যাচ্ছে যা বাণিজ্যিকভাবে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যখন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর সহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো চালু হবে তখন এখানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, এই বিষয় টা আমি উধ্বর্তন কর্মকর্তাকে আবার জানাব। যেন মহেশখালীতে দ্রুত গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়।
সাধারণ মানুষের স্বল্পমূল্যে গ্যাস ব্যবহার করার জন্য গ্যাস সংযোগ করার বিকল্প নাই মনে করছেন সচেতন মহল। এত কাছে গ্যাস পেয়ে ও জেলাবাসী বঞ্চিত যা একধরণের বৈষ্যম্যতা দাবি করেন স্থানীয়রা। সরকার দ্রুত গ্যাস সংযোগ স্থাপন করবেন বলে আশা করেন।
আনন্দবাজার/শাহী/ছোটন