করোনার কারণে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেনা। তাই দেশের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রোগীদের ভীড়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ শাখার বিলক্লার্ক মোঃ নূরুল হুদা মরণব্যাধী ক্যান্সার রোগে দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত। তিনি বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি মনে করেন, ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যবস্থা জেলা পর্যায়ে থাকলে গবীর মানুষরা উপকৃত হবে।
এদিকে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০২১’র এবারের প্রতিপাদ্য ‘‘ আমি আছি আমি থাকব ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’’ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আলোচনায় বক্তারা বলেন, ধূমপান ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। পরোক্ষ ধূমপানে শিশু ও নারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেশি। ক্যানসার হওয়ার আগে প্রতিরোধকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, সচেতনতা খুবই প্রয়োজন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ খায়রুজ্জামানের সভাপতিত্বে ক্যান্সার বিষয়ে বিষদ আলোচনায় অংশ নেন সহকারী সার্জন চিকিৎসক মোঃ আহসান উল্লাহ আহাদ। তিনি বলেন,ক্যান্সারের বিভিন্ন কারণের মধ্যে ধূমপান অন্যতম। বিশেষ করে ফুসফুস, মুখগহ্বর, গলা, পাকস্থলী, কিডনি, যকৃত ইত্যাদি ক্যান্সারের বিভিন্ন কারণের মধ্যে ধূমপান অন্যতম। ধূমপায়ীদের চেয়ে অ-ধূমপায়ীদের ফুসফুস ১০ গুণ বেশি ক্ষতি হয়। পরোক্ষ ধূমপানে নারীরা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। স্তন, জরায়ুমুখ, গলা, মুখগহ্বর ক্যান্সার বেশি নারীদের।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ খায়রুজ্জামান বলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। ক্যান্সার থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে প্রথমেই সচেতন হতে হবে। সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থায় বেশির ভাগ ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। পুরুষদের বেশি হয় ফুসফুস ক্যান্সার আর মেয়েদের স্তন ক্যানসার। ঠিক সময় রোগনির্ণয় হলে ক্যান্সার এখন আতঙ্কের কারণ নয়। ফুসফুস ক্যান্সারের বেশির ভাগ রোগীই গরিব।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গাজীপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি মঞ্জুর হোসেন মিলন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, প্রতি ১০ লাখ রোগীর জন্য একটি করে ক্যানসার হাসপাতাল প্রয়োজন। সে অনুযায়ী গাজীপুরে ৬টি ক্যানসার হাসপাতাল হওয়া দরকার। ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা ব্যায়বহুল, সরকারি হাসপাতালে রোগীরা সব রকম সুবিধা পেলে বিদেশে যাবেনা। ক্যানসার রোগীদের যাতে কষ্ট করে বিদেশ যেতে না হয়, সে জন্য ক্যান্সার চিকিৎসার সব সুযোগ-সুবিধাসহ একটি সমন্বিত ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। জেলায় ক্যান্সার রোগীর পরিসংখ্যান থাকতে হবে। গাজীপুরে একটি ক্যান্সার হাসপাল নির্মাণ হলে টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারা গরিব লোকদের দুঃখ ও আক্ষেপ কমবে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ হাফিজ উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটি নির্মাণাধীন, কাজ শেষে পুরোপুরি চালু হলে ক্যান্সার ইউনিট থাকতে পারে, এর ফলে জেলার গরিব মানুষরা সহজে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুবিধা পাবে।
আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন, গাজীপুর সিভিল সাজর্ন অফিসের স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নূরুল ইসলাম, খাদেমুল ইসলাম ও জিয়াউর রহমান প্রমূখ।
আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ