আগামী ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়াসহ দেশের ৬৪ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এতে জমে উঠেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া পৌরসভা নির্বাচন। শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কেবল মাঠের প্রচারণাই নয়, ডিজিটাল প্রচারণাও চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। দিন যতও গড়াচ্ছে পৌরসভা নির্বাচনকে সমানে রেখে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলার পদপ্রার্থীরা।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরুড়া পৌরসভায় নির্বাচনে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাবেক মেয়র ও পৌরসভা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, গত ১০ বছরের আমি বরুড়া পৌরসভা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করছি। জয় জন্য দিনরাত পৌর এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছি, আমি আশাবার্দী ধানের শীষের জয় হবেই।
এদিকে নৌকা প্রতীকের জয় ছিনিয়ে আনতে অবিরাম প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বরুড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বকতার হোসেন। তার পক্ষে প্রচারণা কাজ করছেন বরুড়া ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনগুলো। তিনিও জয় ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। ভোটাদের দিচ্ছেন নানা উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি।
তবে একইদলের কয়েকজন প্রার্থী থাকায় বেকাদায় আছেন তিনি। এ পৌরসভা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন কুমিল্লা (দঃ) জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক মেয়র বাহাদুরুজ্জামান। তিনিও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। দিচ্ছেন বরুড়া পৌরসভাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা ও নানা ধরনের ইশতেহার।
হেলমেট মার্কা প্রতীক নিয়ে আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুল হাসান। তিনি কারাভোগ অবস্থায় মনোয়নপত্র দাখিল করে প্রার্থীতা নিশ্চিত করে আলোচনায় আসেন। বর্তমানে তিনি কারোভোগে থাকলেও তার সমর্থকরা হেলমেট মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমর্থকরা আশাবাদি তিনি আজ-কালকের মধ্যে জামিনে মুক্ত হয় সরাসরি নিবার্চনী প্রচারণায় অংশ নিবেন।
এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আবদুল কাদের সাঈদ মোবাইল প্রতীক, আবদুল কাদের হাতুরী প্রতীক ও ইসলামী আন্দোলনের আবুল বাশার হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
বরুড়া উপজেলা রির্টানিং অফিসার আজহারুল ইসলাম জানান, আগামী ৩০ জানুয়ারি সকাল থেকে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
এদিকে জেলার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার নির্বাচনের প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীক পেয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন প্রচার-প্রচারণা ও জনসংযোগে। ৪ মেয়র ও ৯ ওয়ার্ডের ৬১ কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে, কখনো মাঠে আবার হাটবাজারে গিয়েও কুশল বিনিময় করছেন। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এলাকা ভিত্তিক গণসংযোগ করছেন। এখানকার মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ উন্নয়নের নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তারা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
শেষ সময়ে উৎসবমুখর প্রচারণায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিএম মীর হোসেন মীরু নৌকা প্রতীক নিয়ে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি, পথে ঘাটে, বাজার-হাটে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ মজুমদার। তিনিও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার প্রচারণায় সরব রয়েছেন।
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছাড়াও বিএনপি দুই বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক হাসান শাহরিয়ার ও সাবেক ছাত্রদল নেতা বেলাল আহমেদ মিয়াজীও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি, পাড়ায় পাড়ায় দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। রিকশা, সিএনজি ও অটোরিকশায় মাইক দিয়ে করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাছাড়া প্রতীক সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিতে শোভা পাচ্ছে। প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত সমগ্র পৌর এলাকায় এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিএম মীর হোসেন মিরু বলেন, ‘পৌরসভাসহ সারা চৌদ্দগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন সাবেক সফল রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে পৌরবাসী আগামী ৩০ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় আমাকে ভোট দিয়ে তাদের খেদমত সুযোগ করে দিবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। জনগণের ভোট, দোয়া ও ভালোবাসায় আমি বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ’।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রহমত উল্যাহ বাবুল বলেন, ‘নৌকার প্রশ্নে কোনো বিরোধ রাখা যাবে না। নৌকাকে বিজয়ী করতে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বিএনপির প্রার্থী ও পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নির্দেশে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মানুষ তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করতে পারলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয় বলেন প্রার্থীতা প্রত্যাহার ঘোষণা দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ না করলে তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল’।
আনন্দবাজার/শাহী/আলাউদ্দিন