ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য

কুমিল্লা মহানগরীর পরিত্যক্ত ঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়ে আছে। অদৃশ্য কারণে গত ৭ বছরেও এসব ভবনের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নগরীর আধুনিকায়নে এসব ভবন নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) কর্তৃপক্ষ নগরীর ৩৮০টি ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জরাজীর্ণ ১৬০টি ও ২২০টি অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। কুসিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে কুসিক কর্তৃপক্ষ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবন অপসারণ এবং অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত ভবনের অংশ ও নকশাবিহীন ভবন ভাঙার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ভবনমালিকদের বরাবর একাধিকবার নোটিশ পাঠায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এসব ভবনের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর বাদুরতলা এলাকায় খোদ কুসিকের মালিকানাধীন হাজি তারু মিয়া পৌর বিপণি ও পৌর কর্মচারি কল্যাণ সমিতি ভবনসহ বাণিজ্যিক ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নগরীর ঝাউতলা এলাকায় কুমিল্লার দুই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাসভবন রাজলক্ষ্মী ও কামিনী কুটির, অশোকতলার জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক, জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়, কান্দিরপাড় লাকসাম সড়কের বিএমএ ভবন, এম ভট্টাচার্য অ্যান্ড কোম্পানির ভবন, ধর্মসাগরপাড়ের কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়, রাণীর দীঘির পাড় ফুলার হোস্টেল, ঠাকুরপাড়ার মৃণালিনী দত্ত ছাত্রীনিবাস, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরের তিনটি ভবন, বাগিচাগাঁওয়ের গণপূর্ত বিভাগের কোয়ার্টার, মনোহরপুরের জমি বন্ধকি ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনের তালিকায় রয়েছে।

এছাড়াও, দীর্ঘ এক যুগ আগেই পরিত্যক্ত ঘোষিত নগরীর রাজগঞ্জ এলাকার রাজবাড়ী কম্পাউন্ড-সংলগ্ন একটি দ্বিতল জরাজীর্ণ ভবনের নিচতলায় অন্তত ২০টি দোকানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একই চিত্র নগরীর ব্যস্ততম কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী ব্যাংক ভবনের নিচতলার। এ ভবনের ওপরের তিনটি অংশে ‘স্থাপনাটি ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা থাকলেও অন্তত ১৫টি দোকানে ব্যবসা চলছে ঝুঁকি নিয়েই। তবে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর পূবালী ব্যাংকের কার্যক্রম পাশের একটি ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নগরীর হাউজিং এলাকার বাসিন্ধা মামুনুর রশিদ, ঠাকুরপাড়ার জিন্নাত আলী, বাগিচাগাঁও এলাকার রুবেল মজুমদার বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে সিটি কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগের কথা শুনে আসছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। এতে দিনে দিনে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বাসিন্দাদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।’ কোনো কোনো ভবনে ‘স্থাপনাটি ঝুঁকিপূর্ণ’ এমন সতর্কীকরণ নোটিশেই আটকে আছে সিটি কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ।
ভবনমালিকদের অনেকে সিটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাটানো সতর্কীকরণ নোটিশ সরিয়ে ফেলেছেন। প্রভাবশালীদের তদবিরসহ নানা কারণে এসব ভবন ভাঙা হয়নি বলেও অভিযোগ তাদের।

কুসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ নূরুল্লাহ বলেন, নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবন রয়েছে ১৬০টি এবং অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত ভবন আছে ২২০টি। এসব ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা চেয়ে তালিকা তিন মাস আগে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ভবনমালিকদের নোটিশ দিয়েছি। জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত ও নকশাবিহীন ভবনের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’

আনন্দবাজার/শাহী/আলাউদ্দীন

সংবাদটি শেয়ার করুন