ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত লালমনিরহাটের চরের শিশুরা

লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের শিশুরা সাধারণত শুধু স্কুলেই পড়াশুনার চর্চা করে থাকেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গেল নয় মাস ধরে বইয়ের সঙ্গে নেই তাদের কোনো সম্পর্ক। পাঠ্যপুস্তক বইয়ের কোথায়, কী আছে সেটাও জানা নেই তাদের। ফলে ভেস্তে গেছে তাদের সেই চর্চা। পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েছেন চরের শিশুরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান। লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারের সদস্য সে। করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার সময় কাটছে চরের জমিতে ফসলের খেতে কাজ করে। দিনভর শ্রম দিয়ে বাবা আকরাম হোসেনকে সহযোগিতা করছে ফসল ফলাতে। বাড়ি থেকেও পড়াশুনার নেই কোনো চাপ। একই অবস্থা চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী রিয়াদ ইসলামের। স্কুল বন্ধ থাকায় বাবা আজিজুলের সাথে চরের জমিতে প্রতিদিন কাজ করতে হয় তাকে। পরিবারের লোকজন অশিক্ষিত হওয়ায় পড়াশোনার কোন চাপ দেয়া হয় না রিয়াদকে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ও রিয়াদ ইসলাম জানান, স্কুল অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকায় তাদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। সকালে একটু খেলতে পারলেও দিনের বেশির ভাগ সময় তাদের বাবার সাথে কাজ করতে হয় জমিতে। পড়াশুনা করতে না পারায় তাদের এখন খুব খারাপ লাগে।

অভিভাবক আকরাম হোসেন, আজিজুল সহ কয়েকজন জানান, তাদের শিশুরা স্কুল-নির্ভর পড়াশোনা করে। স্কুল খোলা থাকলে সেখানে পড়তে যায় আর বাড়িতে এসে স্কুলের পড়া চর্চা করে। কিন্তু করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাইভেট শিক্ষক বাড়িতে রাখার মত সামর্থ নেই তাদের। তাই অনেক অভিভাবক পড়াশোনা চালু রাখতে বাধ্য হয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেচ্ছেন শিশুদের। কেউ বা আবার সাথে নিয়ে যাচ্ছেন সহযোগিতার জন্য জমিতে। তবে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া শিশুদের এ ক্ষতি কি ভাবে পুষিয়ে নেওয়া হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন চরের অভিভাবকরা।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী জানান, নদী বিস্তৃত এলাকার যে সকল চরের শিশুরা সংসদ টিভি ও বেতারের ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন স্কুল খোলার পর নতুন বই পেলেও পূর্বের শ্রেণির বই সংরক্ষনে রাখতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আর শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে নতুন বইয়ের ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্বের শ্রেণির বইয়ের যে সকল স্থানে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে। এতে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।

আনন্দবাজার/শাহী/সমাপ্ত

সংবাদটি শেয়ার করুন