চট্টগ্রামের রাউজানের কুখ্যাত ডাকাত পুলিশের তালিকা ভুক্ত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, নারী পাচারসহ দেশে একাধিক ডাকাতি ও মাদক মামলার আসামী মোঃ ইদ্রিস ওরফে ডাকাত ইদ্রিস, ওরফে ট্যাক্সি ইদ্রিস (৪০) ও রাউজানের আরেক সন্ত্রাসী বাপ্পীকে নারী নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ অবস্থায় মাদকসহ গ্রেফতার করেছে শারজাহ পুলিশ ।
শারজাহ পুলিশ গতকাল এক বিবৃতিতে কুখ্যাত ডাকাত ইদ্রিস ও বাপ্পীকে গ্রেফতারের খবর জানিয়েছে।
আটক ডাকাত ইদ্রিস ওরপে ট্যাক্সি ইদ্রিস চট্টগ্রামে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন সাম্মালদার পাড়া গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে। তার সহযোগীর শাহাদাত হোসেন বাপ্পী ওরপে বোতল বাপ্পী একই উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাইয়ের ব্রাম্মনকান্দা গ্রামের মৃত মুনসুর মোল্লার ছেলে।
জানা যায়, ইদ্রিস ছিল ছিঁচকে চোর। ছিঁচকে চোর থেকে রাউজান শীর্ষ সন্ত্রাসী। এক সময় তার হাতে নোয়াপাড়ার মানুষ জিম্মি ছিল। তার উত্থান হয় রাউজানের আরেক কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজল হকের সহযোগী হিসাবে। গত জোট সরকারের আমলে ফজল হকসহ সে বিএনপিতে যোগ দেয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজল হকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে রাউজানে হত্যা, অপহরন, চাদাঁবাজী, ডাকাতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। পরিচিতি পায় ডাকাত ইদ্রিস হিসাবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর র্যাব ও পুলিশের তাড়ায় একপর্যায়ে দেশ ছেড়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজল হক সৌদি আরবে আর ডাকাত ইদ্রিস পালিয়ে চলে যান দুবাই।
দুবাই গিয়ে আশ্রয় নেন সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া নারী পাচারকারী চক্রের প্রধান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা মো. আজম খানের কাছে। সেখানেও ডাকাত ইদ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশীদের রুমে ডাকাতির ঘটনা ঘটান। কয়েকবার হাতেনাতে ধরাও খেয়েছেন। এরপর যুক্ত হন আজম খানের নারী ও মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্য হিসেবে। আজম খাঁন গ্রেফতার হওয়ার পর ধীরে ধীরে ভাগ্য খুলতে থাকে ডাকাত ইদ্রিসের। নারী পাচারের ব্যবসা চলে আসে তার হাতে। সে সহযোগী বাপ্পীকে নিয়ে দুবাইয়ে ‘যৌনব্যবসা’ চালিয়ে হয়ে ওঠেন বিত্তশালী।
দুবাইয়ের বিভিন্ন ক্লাব ও হোটেলে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে অল্পবয়সী সুন্দরী তরুণীদের পাচার করে দুবাইয়ে নিয়ে যেত সে। তারপর সেখানে নিয়ে গিয়ে আজম খাঁনের মালিকানাধীন দুবাইয়ের ফরচুন পারল হোটেল অ্যাণ্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়্যাল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ারের আটকে রেখে তাদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন চালাত। বাধ্য করা হত যৌনকর্মে। নারী পাচারের সাথে বাংলাদেশ থেকে সে বাপ্পীকে দিয়ে ইয়াবাও পাচার করতো।
ইদ্রিস দুবাইয়ে নিজেকে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে পরিচয় দিত। কিন্তু ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও তার আড়ালে সে দুবাই, শারজাহ, আজমান, রাস আল খাইমাহ ও আবুধাবী সহ আমিরাতের বিভিন্ন হোটেলে যৌনকর্মি ও মাদক সাপ্লাই করতো।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানান, ডাকাত ইদ্রিস শারজাহস্থ জামাল আব্দুল নাসের এলাকায় একটি বাঙালি সেলুনের সামনে বোতল বাপ্পীসহ সংঘবদ্ধ চক্রটিকে নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আড্ডা দিত। সেখানে বসে সব অপকর্মের পরিকল্পনা নিত। তারা অনেকটা দুবাইয়ের জামাল আব্দুল নাছের এলাকাটিকে সন্ত্রাসীদের আস্তনায় পরিনত করেছে। গত কয়েকদিন আগে রাস আল খাইমাহর মাসুদ নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে তার ল্যান্ড ক্রোজার গাড়িতে করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে অপহরণ করে ইদ্রিস ও বোতল বাপ্পী। পরে শারজাহ পুলিশ অপহৃত ব্যবসায়ী মাসুদকে উদ্ধার করেন বলে জানা যায়।
কুখ্যাত ডাকাত ইদ্রিস আটক হওয়ার পর প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে সস্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে দেশ থেকে নারী সাপ্লাই দিতেন তার ছোট ভাই এন ইসলাম (ছন্দনাম)। সে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী সংগ্রহ করতেন। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে নারী সংগ্রহের কাজটি তদারকি করতেন। সংগ্রহ করা নারীদের পাসপোর্ট তৈরি করে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও তারই ছিল। সম্প্রতি রাউজানে নোযাপাড়া এলাকায় এক প্রবাসীর জায়গায় দখল করতে গিয়ে স্থানীয়দের গণ পিটুনির স্বীকার হয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছেন।
রাউজান থানা সূত্র জানান, ডাকাত ইদ্রিসের বিরুদ্ধে রাউজান থানাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, মাদক পাচার, মানবপাচার ও ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
আনন্দবাজার/শাহী/মতিন