চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঘাগড়া তহসিল অফিস এখন ঘুষ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না এই তহসিল অফিসে। তহসিল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতারা ঘুষ দেওয়ার পরও কাজ হয় না। এক কথায় ঘাগড়া তহবিল অফিসে চলছে ঘুষ, দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব। শুধু তাই নয় তহসিল অফিসের চৌকাঠ পেরুলেই তহশিলদারদের নিজস্ব আইন মানতে হয় ভূমিসেবা নিতে সাধারণ মানুষকে।
জানা যায়, ঘাগড়া তহসিল অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির ফর্সা উত্তোলন, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, সরকারী খাস ভূমির হেফাজতকরন, ভূমিহীনদের কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, নামজারীর প্রস্তাব দেয়া, অফিসে হালনাগাদ ভূমি রেকর্ড সংরক্ষন করা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হাট বাজার হতে খাজনা আদায় করা, সরকারি জলমহাল গুলি রক্ষনাবেক্ষন করা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারী নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিক ভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, হয়রানি আর ভোগান্তি কি তা ঘাগড়া তহসিল অফিসে না এলে বোঝা যায় না। ‘ঘাগড়া তহসিল অফিসের দেয়ালও ঘুষ খায়’। এখানে সেবা পেতে হলে ঘুষ দিতেই হবে, অন্যথায় ঘুরতে ঘুরতে জীবন শেষ। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ আদায় করা যায় না। বছরের পর বছর ফাইলবন্দী থাকে। ঘুষ ছাড়া কোন কাজেই হাত দেন না তহসিল অফিসের কর্তারা।
ভূমি সংক্রান্ত কাজে আসা ইসলামপুর গ্রামের মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, ‘মালিকানার রেকর্ড জালিয়াতের মাধ্যমে চলছে ভূমিদস্যুতার দৌরাত্ম। ভূমিদস্যুদের দৌরাত্মে ভূমির মালিকরা নিজেদের জমি-জমা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসের সাথে ইউনিয়ন তহসিল অফিসের রেকর্ডপত্রে রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। এমনকি ভূমিহীনদের নামে সরকারি বন্দোবস্তি দেওয়া দলিল ও হস্থাস্তর নিয়ে চলে লুকোচুরি খেলা।’
রাজানগর গ্রামের মনির হোসেন বলেন, ‘ঘাগড়া তহসিল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট চক্র ভূয়া নামজারি খতিয়ান তৈরি করে নিরীহ মানুষের জমি জবর দখল করে চলছে। এ ভূমিদস্যু চক্র ভূয়া রেকর্ডের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা করার কারণে নিরীহ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ভূমি বিরোধ। তহসিল অফিসের দালাল চক্রের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নাম জারির কাজটি চলছে অনিয়মের মধ্যেই। সরকার মিউটেশন বা নামজারী মামলার নির্ধারিত ফি ২৪৯ টাকা নির্ধারণ করলেও তহসিলদার নুরুল আবছার দালালের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। জায়গার কাগজপত্রে কোন রকম হেরফের থাকলে টাকা গুনতে হয় আরো বেশী।’
দঃ রাজানগর ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের মো. সুলতান আহম্মদ বলেন, ‘ঘাগড়া তহসিল অফিসে ৪০ শতক বাড়িভিটা জমি নামজারি করার জন্য আবেদন করেছি। আজ নয় কাল বলে র্দীঘদিন ধরে আমাকে হয়রানী করা হচ্ছে। কোন উপায় না পেয়ে ঘাগড়া তহসিল অফিসের তহশীলদার মো. নুরুল আবছারকে টাকা দিতে হয়েছে।’ একই অভিযোগ সেবা নিতে আসা মো. ইসকান্দরের। তিনি জানান, ২০ শতক জমি নামজারি করতে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়েছে। তবুও হয়রানীর শেষ নেই।
দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘রানীরহাটস্থ ঘাগড়া তহসিল অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা এলাকার জনগণকে জিম্মি করে অতিরিক্ত হারে টাকা আদায় করছে। নামজারির অজুহাতে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে শতগুন বাড়তি টাকা নিচ্ছে। এভাবেই ঘাগড়া তহসিল অফিসের তহশীলদার মো. নুরুল আবছার ভূমির কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালালের মাধ্যমে নামজারি বা মিউটেশনর মত কাজটি হয়ে থাকে। এদের মাধ্যমে ভূমি নামজারি না করালে সাধারন জনগনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
ঘাগড়া ভূমি অফিসের সহকারী তহশীলদার মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন দায়িত্বরত তহশীলদার নুরুল আবছার সাহেব। তিনি ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না।’
ঘাগড়া তহসিল অফিসের তহশীলদার মো. নুরুল আবছার বলেন, ‘উর্দ্ধতন মহলকে ঘুষের টাকা জোগান দিতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে হয়। তবে আমি কাউকে দালাল ধরার পরামর্শ দেয়নি। পত্রিকায় লিখলেও কোন কাজ হবে না। উপর মহল আমার পক্ষে আছে। শুধু শুধু আপনার সময় নষ্ট হবে!’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাঙ্গুনিয়ার ঘাগড়া তহসিল অফিসে উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ভূমির কাজ সম্পাদন হয়। এই তহসিল অফিসে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দূর্নীতিবাজ তহসিল কর্মকর্তারা।
আনন্দবাজার/শাহী/মতিন