আজ আলোড়িত আন্দোলিত বর্ষ বিদায়ের দিন। আজ রাতটুকু পেরুলেই দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে। বহু ঘটনার জন্ম দিয়ে মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে আরও একটি বছর। অনেক ঘটনা মুছে যাবে বিস্মৃতির ধুলোয়। বর্ষবরণের আবাহন রেখে গোধূলি বেলায় কুয়াশামোড়া রক্তিম সূর্য আজ বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। জীর্ণ ঝরা পল্লবের মতো সরল রৈখিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আজ খসে পড়বে ‘২০২০ খ্রিষ্টাব্দ। মধ্যরাতে নতুন বছর ২০২১-কে স্বাগত জানানোর উৎসবের বাঁশি বেজে উঠবে সবার প্রাণে। উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের নতুন সূর্যের অসীম প্রতীক্ষায় বিশ্ববাসী। স্বাগত জানাবে ইংরেজি নতুন বছর ২০২১ খ্রিস্টাব্দকে।
এদিকে নতুন বছরে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরকে বরণে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল ইকো পার্ক। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ ছিল ইকো পার্ক। এতে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে রাঙ্গুনিয়ার পর্যটন ব্যবসা। দীর্ঘ ৮ মাস পর সর্বসাধারণের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে শেখ রাসেল ইকো পার্ক উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে পর্যটনদের ভীড় কিছুটা বাড়তে থাকলেও বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রাঙ্গুনিয়ার একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক। আর পর্যটকদের ভ্রমন অবাধ করতে রাঙ্গুনিয়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতিপূর্বে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে শেখ রাসেল ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে শীতের হিমেল হাওয়ায় ডানা মেলেছে পার্ক ঘেরা পাহাড়ের নৈসর্গিক প্রকৃতির সৌন্দর্য। হাতছানি দিচ্ছে সবুজ পাহাড়, লেকের স্বচ্ছ জল আর পাহাড়ি ঝরনাগুলো।
রাঙ্গুনিয়ার উপজেলার কোদালা বনবিটের আওতাধীন হোছনাবাদে অবস্থিত শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক। দেশের দীর্ঘতম ক্যাবল কার রয়েছে এই পার্কে। তাই ক্যাবল কারে চড়ে আনন্দ উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে আসছে শত শত পর্যটক। বর্ষ বরণে পর্যটন উপশহর খ্যাত কাপ্তাইয়ের প্রবেশের আগে বিনোদন প্রেমীদের জন্য আকর্ষনীয় করা হয়েছে এই শেখ রাসেল ইকো পার্কটি। বৃক্ষাচ্ছাদিত সবুজ এই পাহাড়ি পার্কের বন-বাদারে শত শত পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। পাখিদের কলতানে মুখরিত হয় সবুজ বন।
পার্ক বেষ্টিত উঁচু নিচু অসংখ্য পাহাড় আর পাহাড়ের বুকে নাম না জানা হাজারো গাছের সবুজ পাতায় সজ্জিত পাহাড়কে মনে হয় যেন সবুজের অভয়ারণ্য। উঁচু-নিচু ঢেউ তোলা সবুজ পাহাড়ের বুকচিরে মাথার সিঁথির মতো বয়ে যািয়া সর্পিল রাস্তা আর পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য যে কোনো পর্যটকের মন কাড়বে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। পার্কের মাঝখানে কৃত্রিম নীল জলরাশির লেক আর চারদিকে ঢেউ তোলা সুউচ্চ পাহাড়, দিগন্ত ছোঁয়া সবুজের সমারোহ সবাইকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আর এখানে রয়েছে দেশের দীর্ঘতম আড়াই কিলোমিটার ক্যাবল কার ও পক্ষীশালা। ক্যাবল কারে কৃত্রিম লেকের উপর দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো যায়।
এখানে এলে দেখা যাবে দেশী প্রজাতির পাখির পাশাপাশি আফ্রিকার পলিক্যান, ইলেকট্রাস প্যারট, সোয়ান, রিং ন্যাক, মেকাউ, টার্কি। পার্কের অভ্যন্তরে সড়ক, লেক, রিটার্নিং ওয়াল, গেস্ট হাউজ, ফুট ব্রীজ, গুহা, পাখি, ময়ূর ও হরিণসহ বিভিন্ন দেশি বিদেশী পক্ষিকুল বিচরণের খাঁচা, এ্যামিউজমেন্ট, গোলঘর। সাথে আম, জাম, বহেরা, ডুমুর, জামরুল, আমলকি, হরিতকি, চাপালিশ, সোনালু ডাকিজাম তেঁতুলসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির দেশীয় বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ।
পার্কের সহকারি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসিবুর রহমান বলেন, ‘পার্কটি খুলে দেয়ার পর গত কয়েক দিন ধরে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। পার্কে এক ধরনের বিশেষ নেট দিয়ে পুরো পাহাড়ি ভূমির উপরিভাগ ঘিরে দেয়া হয়েছে। পার্কের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত প্রজাতির পাখিদের অভয়ারণ্য। আশা করছি, গত আট মাসের লোকসান কমিয়ে আনতে পারবো।’
পার্কের ক্যাবল কারে দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার সাঈদ সাকলাইন জানান, মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্ক খোলার দিন থেকে প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড় বাড়চ্ছে। এই পার্কের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ক্যাবল কার। মঙ্গলবার ছাড়া যেকোনো সময় পর্যটকরা পার্কের ক্যাবল কারে চড়ে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে ক্যাবল কারে পর্যটকদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরতে হবে।
রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ও পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম করিম বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শেখ রাসেল ইকো পার্ক খুলে দেয়া হয়েছে। বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উপলক্ষে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে পার্ককে। পর্যটকদের জন্য বিদেশী পাখি আনা হয়েছে। পার্কেট প্রবেশমুখে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটকদের পার্কে ঢুকানো হবে।’
রাঙ্গুনিয়া থানা ইনচার্জ মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উপলক্ষে পর্যটকদের সমাগম ঘটবে। তবে কোন অপ্রীতিক ঘটনা যাতে না ঘটে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য থানা পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে। সে সাথে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আনন্দবাজার/শাহী/মতিন