ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্মাণ ব্যয় উঠে গেলেও টোলমুক্ত হয়নি ‘ফকির মজনু শাহ’ সেতু

নির্মাণ ব্যয় উঠে গেলেও টোলমুক্ত হয়নি ‘ফকির মজনু শাহ’ সেতু

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ্ সেতু ১৫ বছর পরও টোলমুক্ত হয়নি। নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা হলেও ইতোমধ্যে সেতুর ইজারা বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা। গত ২৩ ডিসেম্বর সেতু কর্তৃপক্ষ গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন হতে টোল আদায়ের নিমিত্তে আগামী তিন বছরের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেতুটি ইজারা দেয়ার জন্য দরপত্র আহবানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগীরা।

গাজীপুর সড়ক বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপি সরকারের সাবেক পাটমন্ত্রী প্রয়াত আ.স.ম হান্নান শাহ্র প্রচেষ্টায় ১৯৯৩ সালে কাপাসিয়ার বানার নদীর উপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৩৯০ দশমিক ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরুর প্রায় ১২ বছর পর ২০০৫ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যান চলাচলের জন্য সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর দুই পাড়ের লোকজনের চলাচল ও মালামাল পরিবহন যেমন সহজ হয়ে উঠেছে, তেমনি ঢাকা থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং বৃহত্তর সিলেটের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে সেতুটি দিয়ে প্রতিবার পার হতে গেলে বড় লরির টোল দিতে হয় ২৮০ টাক, ট্রাক ১৪০ টাকা, বড় বাস ৯০ টাকা, মিনিবাস ও পিকআপ ৫০ টাকা, মাইক্রোবাস ৪০ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা, সিএনজি অটোরিক্সা ১০ টাকা ও মোটর সাইকেল ৫ টাকা।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক এবং বিভিন্ন যানবাহন চালকদের সাথে। আগামী তিন বছরের জন্য ইজারার জন্য দরপত্র আহবানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা। জলসিঁড়ি এক্সপ্রেস পরিবহনের পরিচালক চিত্তরঞ্জন সাহা জানান, তাদের পরিবহনের বাস চলাচল করতে এ সেতুতে প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার টাকা টোল দিতে হয়। এ সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করতে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে অতি সত্বর যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান তিনি। অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের এম ডি বাবুল খান জানান, বর্তমানে ঢাকা-কাপাসিয়া- কিশোরগঞ্জ আ লিক মহা সড়ক ও ঢাকা-কাপাসিয়া- মনোহরদী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সাতটি পরিবহন কোম্পানীর প্রায় সাড়ে তিনশত যাত্রীবাহী বাস দিন রাত চলাচল করে। এ সেতু টোলমুক্ত হলে তারা করোনা জনিত সংকটকালে পরিবহন ব্যবসার আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।

আন্ত:জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন কাপাসিয়া শাখার সভাপতি মোঃ আকরাম হোসেন খান জানান, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিক্সা, ট্রাক, ট্রলি, লরি, নসিমন, মোটর সাইকেলসহ হাজার হাজার যানবাহন এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয়। যেহেতু সরকারের নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি টাকা উঠে গেছে তাই এ সেতুকে টোলমুক্ত ঘোষণার জোর দাবি জানান তিনি।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফউদ্দিন জানান, এ মুহূর্ত পর্যন্ত সেতুটি সরকারের ইজারার তালিকাভুক্ত হিসেবেই রয়েছে। তিনি যে দরপত্র আহবান করেছেন তা বাস্তবায়ন হবে আগামী জুন মাসের পর থেকে। যেহেতু বিষয়টি জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে পরবর্তী সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন