শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সরে কিছুটা প্রাকৃতিক ছোঁয়ার জন্য ঘুরে আসুন ইতিহাসের গন্ধমাখা ব্রিটিশ বাংলো, চা বাগান আর সবুজ বনায়নে ঘেরা অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান। যেখানে গেলে মুহুর্তের মাঝে নিজেকে সতেজ করে দেয়। সবুজের সাথে লুকোচুরি মেঘের সন্ধির অপুর্ব দৃশ্য যে কাউকে অবাক করে দেবে। প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ করবে পর্যটক প্রেমিকদের। চা বাগানের দৃষ্টি নন্দন ব্রিটিশ বাংলো আর পাখির কিচিমিচির শব্দ বিনোদন প্রেমিকদের মুহুতের্র মধ্যে চাঙ্গা করে তুলবে। চা বাগানের চা শ্রমিকদের দৈনন্দিন চা পাতা তোলার দৃশ্য কার না ভাল লাগে। চা বাগানের পাশ ঘেঁষে লুসাই কন্যা কর্ণফুলীর মন মাতানো ঢেউ সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেবে নিঃসন্দেহে । চা শ্রমিকদের ক্লান্তিহীন কর্মযজ্ঞে নিজেকে স্বপ্ন দেখাবে ভবিষ্যত চলার পথ। নগর জীবনের গতিহীন একপেশে ক্লান্তিময় জীবন আপনাকে ভরিয়ে দেবে আনন্দের ছোয়া।
রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান দেশের শীর্ষ চা-বাগান গুলোর মধ্যে অন্যতম। উৎপাদন ছাড়াও চা বাগানটি ইতিমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পর্যটন র্স্পট হিসেবে। চা বাগানে প্রতি দিন ছুটে আসছে শত শত ভ্রমন পিপাসু। চা বাগানে পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে সার্বিক পরিবেশ। বাগানের আর্কষনীয় মনোরম দৃশ্য ধারণ করতে ছুটে আসছে বিভিন্ন ইলেকট্রন্ক্সি চ্যানেল, টেলি ফিল্ম. চলচ্চিত্র নির্মাতারা। শুটিং হচ্ছে নানা ছবি, টেলিফিল্মের। দলবেঁধে বিনোদন পিপাসুরা ছুটে আসছে এই স্পটে। রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগান এখন ব্যস্তময় এলাকায় পরিণত হয়েছে।
১৯৭৬ সালে তৎকালীন সরকার ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দিয়ে চা-বাগানগুলো ছেড়ে দেন। এর মধ্যে প্লান্টাস বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কোদালা চা-বাগান পরিচালনা করে আসছে। লোকসানের কবলে ১৯৯৩ সালে প্লান্টাস বাংলাদেশ থেকে আনোয়ার গ্রুফ চা-বাগানটি লিজ নিয়ে নেন। আনোয়ার গ্রুপও লাভের মুখ দেখতে না পাওয়ায় ২০০৪ সালে ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যাক রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগানের লিজ নেন। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতায় কোদালা চা বাগান সরকার থেকে লিজ গ্রহণ করে ব্রাক ২৪শ ৮৫ একর জায়গা চা বাগানের জন্য। বর্তমানে ব্র্যাক বাংলাদেশ ৮শ ৭২ একর জায়গায় চা চাষ ৯শ একর জমিতে রাবার চাষ করেছেন। এছাড়া চা ও রাবার বাগানের পাশাপাশি নানা প্রজাতির গাছের চারা বনায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও আগর চাষ নিম ও মুলি বাঁশের চাষও করা হচ্ছে।
প্লান্টাস বাংলাদেশ ও আনোয়ার গ্রুপ কোদালা চা বাগান করে লাভের মুখ না দেখলেও ব্র্যাক কোদালা চা বাগান লিজ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দক্ষ পরিচালনায় চা বাগানটি এখন ব্র্যাকের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দেশের চা শিল্পে কোদালা চা বাগানের চা গুনগত মান ও শীর্ষ চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে আসছে।
কোদালা চা বাগানের বড় সুবিধা হচ্ছেঃ
কোদালা চা বাগানে আসার পর তাদের নিজস্ব বাংলোতে রিফ্রেশ ও বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ক্লান্তি কাটাতে চা বাগান থেকে তোলা সতেজ পাতার চা পান করতে পারেন। এবং চা বাগানে ভ্রমনের পাশাপাশি নদী পাড়ে রান্না করে খাওয়ার অপূর্ব সুযোগ আছে।এছাড়াও পর্যটকদের আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে কোদালা চা বাগানে বিশাল জায়গা জুড়ে দৃষ্টিনন্দন কৃত্রিম লেক তৈরী করা হয়েছে। লেকে নৌকায় চড়ে পর্যটকরা চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন অনায়াসেই।
কোদালা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক রাশেদ মাহমুদ রুবেল জানান, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে এ চা বাগানে। দেশের চা শিল্পের অন্যতম ব্যাক্তিত্ব ব্র্যাকের পরিচালকের সার্বিক দক্ষ পরিচালনায় চা বাগানটি সার্বিক সফলতার মুখ দেখেছে।
কোদালা চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন জানান, ব্র্যাক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কোদালা চা বাগান চা উৎপাদনে গুনগত মান বজায় রেখে চা উৎপাদন করে আসছে। ব্রাকের নানা পরিকল্পনা রয়েছে এই চাবাগানকে ঘিরে। সার্বিকভাবে কোদালা চা-বাগানের পরিবেশ দেশের অন্যান্য চাবাগানের চেয়ে উন্নত। শ্রমিক-মালিক এক হয়ে চা বাগানের প্রতিদিনের কর্মকান্ড সম্পন্ন করা হয়। কর্ণফুলী নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে দৃষ্টি নন্দন, সবুজ সমতল আর উচু পাহাড় ঘিরে কোদালা চাবাগানের মন মাতানো দৃশ্য যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে। উল্লেখ্য, এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে বৃটিশরা কর্নফুলী নদী দিয়ে আসা যাওয়ার সময় কোদালা চা বাগানের বির্স্তীণ জায়গা দেখে চা বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে সেই থেকে কোদালা চা বাগান গড়ে উঠে। ১৮৯৪ সালে চা বাগনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের চা বাগানের মধ্যে কোদালা চা বাগানই সর্ব প্রথম।
যেপথে আসবেন
সড়ক পথে ও নদীপথে কোদালা চা বাগানে আসা যায়। সড়ক পথে আসতে হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বিরতিহীন বাসে করে সরফভাটা গোডাউন নেমে সিএনজি যোগে সরাসরি কোদালা চা বাগানে আসা যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে চা বাগানের দুরত্ব ৩০ কিলোমিটার। প্রাইভেট গাড়ী যোগে চা বাগানে অনায়সে আসা যায়। নদী পথে আসতে হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিরতিহীন বাসে মরিয়ম নগর চৌমুহনী নেমে রিক্সা অথবা সিএনজি যোগে কর্ণফুলি পাড়ে আসতে হয়। কর্ণফুলি নদী পাড় হলেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য কোদালা চা বাগান।
থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনার দোভাষী বাজারে রাত্রিযাপনের জন্য বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এবং দোভাষী বাজারে বেশকিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে স্বপরিবারে সূলভ মূল্যে খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।
আনন্দবাজার/শাহী/মতিন