পরিত্যক্ত জায়গার জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে টিনের ঘর তুলেছিলেন বৃদ্ধা লিলি বেগম (৫৫)। সেই ঘরই তার মাথা গোজার একমাত্র অবলম্বন। স্বামীর মৃত্যুর পর চার সন্তান নিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর এখানেই বসবাস করেন লিলির পরিবার। শুধু লিলি একা নন,অসহায় ভুমিহীন ১২ টি পরিবার বসবাস করেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর মৌজার একটি পরিত্যক্ত জমিতে।
যে জমির কিছু অংশে এক সময় পশুন হাট বসতো। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাদের সরকারি পরিত্যক্ত এই জায়গা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। স্থানীয় ভুমি অফিসের পক্ষ থেকে উঠে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বসবাসকারীরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করেন তাদের মাথা গোজার মতো একটা ব্যবস্থা করে যেন উচ্ছেদ করা হয়।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর মৌজায় তিন দাগে প্রায় ১ একর ১৫ শতক জমি রয়েছে। সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত এই তিন দাগের জমির মধ্যে ২ শতক ৫০ পয়েন্ট আছে বাস্তা, ৮৯ শতক ৩৭ পয়েন্ট গোহাট ও ২৩ শতক ৬৩ পয়েন্ট ধানী শ্রেণীভুক্ত রয়েছে। স্থনীয়রা জানান, একটি সময় এই স্থানে পশুর হাট বসতো। পাশাপাশি জমির চারিপাশে জঙ্গলে ভরা ছিল। ২ বছর হলো এখানে পশুর বাজার বসানো হয় না। যে কারনে জায়গাটি আরো জঙ্গলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিদা খাতুন জানান, তারা ভুমিহীন পরিবার। থাকার মতো কোনো জায়গা তাদের নেই। এই অবস্থায় সলেমানপুরের এই সরকারি জমির দক্ষিণ পাশে জঙ্গল পরিষ্কার করে বাসযোগ্য করে তোলেন। জমিটির ভাঙ্গন এলাকায় তারা ১২ টি পরিবার ঘর করে বসবাস করেন। উপরের অংশ এখনও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে বালু রেখে বিক্রি করার কাজ চলে।
তিনি জানান, তারা ৬ সদস্যের পরিবার দীর্ঘ ১৫ বছর এখানে বসবাস করছেন। তাদের যাবার মতো কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। যে কারনে বসবাস অযোগ্য জমিতেই পড়ে আছেন। এখন তাদের চলে যেতে বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে এই স্থানে ডায়াবেটিস হাসপাতাল হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের কল্যানে একটা হাসপাতাল হবে এটা শুনে তাদেরও ভালো লাগছে। কিন্তু তাদের সরকারি ভাবে থাকার ব্যবস্থা না করলে তারা কোথায় যাবেন ? বৃদ্ধা লিলি বেগম জানান, তার দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে ঢাকায় কাজ করে সংসার চালান। ঝুপড়ি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এই অবস্থায় তাদের তাড়িয়ে দিলে কোথায় যাবেন। তারা বিকল্প ব্যবস্থার দাবি করেন।
প্রতিবেশি তরিকুল ইসলাম জানান, যারা দীর্ঘ সময় এই জায়গায় বসবাস করছেন তাদের জন্য সরকারের কিছু করার রয়েছে। সরকারি ভাবে তাদের পুণবাসন ব্যবস্থা করা হোক। এ ব্যপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান রিপন জানান, তারা সরকারি ভাবে এখনও পরিবারগুলোকে উঠে যেতে বলেননি। তবে ওই স্থানে একটি হাসপাতাল নির্মানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জেনেছেন। সে ক্ষেত্রে হাসপাতাল বাস্তবায়নে যে পরিমান জমির প্রয়োজন তার মধ্যে কেউ বসবাস করলে তাদের সরে যেতে হবে। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে ভুমিহীনদের বাসগৃহ নির্মানে প্রধানমন্ত্রীর যে উদ্যোগ রয়েছে, এরা প্রকৃত ভুমিহীন হলে তাদের নামও তালিকাভুক্ত করা হবে। এরপর বরাদ্ধ পাওয়া গেলে তাদের পুণবাসনের ব্যবস্থা করা যাবে।
আনন্দবাজার/শহক