ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাঙ্গুনিয়া ফেরিঘাটে ৩৬ বছরেও সেতু হলো না

রাঙ্গুনিয়া ফেরিঘাটে ৩৬ বছরেও সেতু হলো না

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনায় ফেরি চালুর ৩৫ বছর পরও কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মিত হয়নি। সেনাবাহিনীর গাড়িসহ শত শত যাত্রীবাহী বাস, জিপ, অটোরিকশা ও পণ্যবাহী ট্রাক প্রতিদিন চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট দিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু এ ঘাটে একটি মাত্র ফেরি হওয়ায় একসঙ্গে বেশি যানবাহন পারাপার সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। ভুক্তভোগীরা এখানে একটি সেতু স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৮৪ সালে চন্দ্রঘোনায় ফেরি সার্ভিস চালু করে। এশিয়ার বিখ্যাত কর্ণফুলী কাগজকলের কাঁচামাল আহরণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত বাঁশ, গাছ, মৌসুমি ফলমূল, তরকারিসহ বিভিন্ন মালামাল প্রতিদিন এ ফেরি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বান্দরবান ও রাজস্থলী থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই-রাঙামাটি জেলার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা লাঘবে এ ফেরি যথেষ্ট নয়। বান্দরবান থেকে খুব ভোরে বাসে উঠে চট্টগ্রাম বা রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও ফেরি সমস্যার কারণে যাত্রীদের যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

এলাকাবাসী জানান, এ ঘাটে একটি মাত্র ফেরি হওয়ায় নদীর একপাড়ে ফেরি থাকলে অপরপাড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ফেরিতে উঠতে কমপক্ষে ১ থেকে দেড়ঘন্টা পিছিয়ে পড়তে হয়। দ্রুত ফেরি ধরার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনায় পড়েন।

চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারের আবু তালেব নামের তারকারি ব্যবসায়ী জানান, তিনি গত ১৮ বছর ধরে রাজস্থলী ও বান্দরবান থেকে ফলমূল ও তরকারি কিনে এনে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন হাটবাজারে পাইকারি বিক্রি করছেন। রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রাম ও দেশের বড় বড় শহরগুলো থেকে প্রতিদিন শত শত ব্যবসায়ী রাজস্থলী ও বান্দরবান থেকে শাক সবজি, ফলমূল কিনে নেন। কিন্তু কর্ণফুলী নদী পারাপারের সময় চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে প্রায় সময় লাইন দিয়ে বসে থাকতে হয়। এতে অনেক সময় পণ্য পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ব্যবসায় আশানুরূপ লাভ থাকছে না।

সম্প্রতি সকাল নয়টায় ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে রাজস্থলী ও বান্দরবান থেকে আসা ১৫-২০ টি পণ্যবাহী ট্রাক, জিপ ও টেম্পো লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।

চট্টগ্রাম শহরমুখী ট্রাক চালক নুরু ড্রাইভার জানান, পণ্য নিয়ে ফেরিঘাটে তাঁদের অনেক সময় ১-২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় কাঁচা ফলমূল প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু হলে এমনটি হতো না।

চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারের ব্যবসায়ী ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ইলিয়াছ কাঞ্চন চৌধুরী জানান, ফেরির স্থানে সেতু থাকলে যোগাযোগ যেমন সহজ ও দ্রুত হতো তেমনি কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করণে আরও বেশি ভূমিকা রাখা যেত। তিনি বলেন, রাইখালিতে রয়েছে চন্দ্রঘোনা থানা, কাপ্তাই উপজেলা পশুসম্পদ কার্যালয়। রাজস্থলীতে রয়েছে কয়েকটি সেনা ক্যাম্প, নারানগিরি সরকারি স্কুল। এ ছাড়াও রয়েছে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু সেতু না থাকায় পুরো এলাকা পিছিয়ে রয়েছে।

চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর জানান, ১৯৯১ সালে তৎকালীন সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী কর্ণেল অলি আহমদ একাধিকবার চন্দ্রঘোনায় আসেন এবং জনগণের দাবির মুখে লিচুবাগান এলাকায় কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ও মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও গত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী জনসভায় চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এখনো কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে সেতুর অভাবে ব্যবসা, বাণিজ্যে অনগ্রসরতা এবং জনসাধারণের দুর্ভোগের বিবরণসহ প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণের নিমিত্তে বাংলাদেশ সেতু বিভাগের ৩ সদস্যের একটি টীম চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন টীম চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য সেতু বিভাগের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। হয়তো খুব শীঘ্রই চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণের কাজ আরম্ভ হতে পারে।

আনন্দবাজার/শাহী/মতিন

সংবাদটি শেয়ার করুন