হাম-রুবেলা ভাইরাসজনিত দুটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে তার সংস্পর্শে আসা অন্যদের মাঝে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। শিশু ছাড়াও যেকোনো বয়সের মানুষের হাম-রুবেলা হতে পারে। তবে, শিশুদের মাঝে হাম-রুবেলার প্রকোপ, জটিলতা ও মৃত্যুর হার বেশি। হামের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অপুষ্টি, এনকেফালাইটিস, অন্ধত্ব ও বধিরতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া গর্ভবতী মা প্রথম ৩ মাসে রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভের শিশু আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে গর্ভপাত বা গর্ভের শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। এসব প্রতিরোধে নিয়মিত টিকার পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। সেই সূত্রে জাতীয় হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২০ শুরু হচ্ছে ১৯ ডিসেম্বর। চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ সপ্তাহ।
বৃহস্পতিবার (১৭ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ইপিআই সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এবারে জেলায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৫ জন শিশুকে টিকার আওতায় আনা হবে। যেখানে ৯ মাস থেকে ৫ বছরের শিশু ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৬ জন এবং ৫ বছর থেকে ১০ বছরের শিশু ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৩৯ জন শিশুকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানে এ টিকা খাওয়ানো হবে। সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে টিকাদান ক্যাম্পেইনে জেলায় ৯ টি নির্ধারিত এবং ৫ হাজার ৭৬০টি অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রসহ মোট ৫ হাজার ৭৬৯টি কেন্দ্র থেকে এ সেবা দেয়া হবে। যেখানে স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন ১১ হাজার ৫৩৮ জন। তাদের সহযোগী হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী থাকবে ১৭ হাজার ৩০৭ জন।
এতে আরো জানানো হয়, গত ২০১৪ সালে সর্বশেষ হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয় এবং দেশে রোগ দুটির প্রাদুর্ভাব কমে যায়। কিন্তু রোগ নিরীক্ষণ তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে দেশে আবারো হাম রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। যার কার্যকারিতা এখনো বিদ্যমান। কক্সবাজারে ২০১৯ সালে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাওয়া যায় ৩১২ জন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ১৩৩ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। এসব বিবেচনায় কক্সবাজারকে চিহ্নিত করা হয়েছে হামের রেড জোন হিসেবে। তাই হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে খুবই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে আরো জানায়, হাম-রুবেলা টিকা সারা বছরই দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও ৩ থেকে ৪ শতাংশ অসচেতনতার কারণে গ্যাপ পড়ে যায়। এভাবে সংখ্যা বাড়লে রোগাক্রান্তও বাড়ে। তাই প্রয়োজন বিবেচনায় ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে সরকার। চলতি বছরের শুরুতে রোহিঙ্গা শিবিরের ৩ লাখ ১৫ হাজার শিশু হাম-রুবেলা টিকা পেয়েছে।
বক্তারা বলেন, যদি শিশুদের মাঝে মাঝে জ্বর আসে, জ্বর আসার তিনদিনের মধ্যে শরীরে লাল লাল গুটি দেখা দেয়- তখন ধরে নিতে হবে শিশুটি হাম রেগে আক্রান্ত। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা অবশ্যই করতে হবে। জটিল এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে সঠিক সময়ে শিশুদের হাম-রুবেলার টিকা দেয়া আবশ্যক। এব্যাপারে তৃৃৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্ভবতী মহিলা ছাড়া সব বয়সী মানুষ এ টিকা দিতে পারেন। সরকারি ভাবে সরবরাহ হয় কেবল শিশুদের।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার সৌনম বড়ুয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কক্সবাজারের সার্ভিল্যান্স এন্ড ইস্যুনাইজেশন মেডিকেল অফিসার সুরাইযা আকতার জেমি, ইমার্জেন্সি রেসফন্স প্লান কক্সবাজারের হেলথ কো-অর্ডিনেটর এসএম জামসেদুল হক, স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়ের কো-অর্ডিনেটর সেন্টার কক্সবাজারের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মো. খায়রুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনের আগে স্থানীয়দের সচেতন করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। মুজিববর্ষে স্বাস্থ্য খাত, এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ-এ স্লোগানে হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইনের বিষয়ে জুমার খুতবার বয়ান, মন্দির গীর্জায় প্রচারণা চালাতে অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়াও কক্সবাজারে চলমান বাণিজ্য মেলা, সৈকতের প্রতিটি পয়েন্ট, বাজার এবং জনকোলাহল রয়েছে এমন জায়গায় মাইকিং করার উপর গুরুত্বারূপ করা হয়েছে আলোচনায়।
আনন্দবাজার/শাহী/জসীম