সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের একটি গ্রামের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রী (১৬) বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া আটটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান কনের বাড়িতে গিয়ে ওই বিয়ে বন্ধ করে দেন।
কনের বাবা বলেন, ‘ভালা জামাই ফাইয়া মেয়েডার বিয়া দিতাম চাইছিলাম। ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেওন যাইতো না এইডা আমার জানা আছিন না।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে ওই ইউনিয়নের কাজল সরকার নামের এক তরুণের (২৫) গতকাল রাত নয়টার দিকে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বর ও বরযাত্রীদের স্বাগত জানাতে কনের বাড়ির সামনে তৈরি করা হয় গেট ও অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য তৈরি করা হয় প্যান্ডেল। রাত আটটার দিকে বরসহ ২৫-৩০ জন বরযাত্রী কনের বাড়িতে উপস্থিত হন।
বাল্যবিবাহের আয়োজনের খবরটি পেয়ে রাত সোয়া আটটার দিকে ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান ধর্মপাশা থানার পুলিশ নিয়ে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন। পরে ছাত্রীটির বিদ্যালয়ের কাগজপত্র ঘেঁটে ইউএনও দেখতে পান ছাত্রীটির জন্মতারিখ ২০০৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। এ সময় তিনি কনের বাবা ও বরের বড় ভাই সজল সরকারকে তাঁর সামনে এনে উপস্থিত করেন। এ সময় তিনি বাল্যবিবাহের কুফল ও রাষ্ট্রীয় আইনে এ ধরনের বিয়ের কোনো স্বীকৃতি নেই, এমনটি বুঝিয়ে বলার পর সজল সরকার ও কনের বাবা এই বাল্যবিবাহটি বন্ধ করতে সম্মত হন।
এ নিয়ে বরের ভাই ও কনের বাবা উপস্থিত লোকজনের সামনে ইউএনওর কাছে ক্ষমা চান। ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিজ মেয়েকে বিয়ে না দেওয়া এবং ১৮ বছরের আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে না করানোর ব্যাপারে তাঁরা দুজন লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে বরযাত্রীরা কনের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান।
ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি ও অপরাধ। রাষ্ট্রীয় আইনে বাল্যবিবাহের কোনো স্বীকৃতি নেই। জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণে এই বিয়েটি ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক