দেশে মামলা থাকলেও আসামী রয়েছে বিদেশে। এক দশকে দুর্নীতি মামলার এমন শতাধিক আসামি পালিয়েছেন কানাডা-আমেরিকাসহ নানা দেশে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আসামিকেই দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তির আওতায় দাড় করাতে পারেনি দুদক।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার সংক্ষেপে যিনি পিকে হালদার নামেই বেশি পরিচিত। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
২৭৫ কোটি অবৈধ সম্পদ পাওয়ায় এ বছরের ৮ই জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। কিন্তু তার আগেই তিনি পাড়ি জমান বিদেশে। গেল বৃহস্পতিবার হাইকোটও জানতে চেয়েছে কানাডা থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদক কি ব্যবস্থা নিয়েছে। জানা গেছে, পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে এখনও ইন্টারপোলে চিঠি বা কার্যকরী কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি দুদক।
অপরদিকে ৫৬ মামলারই এক নম্বর আসামি এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম। যিনি বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি ছিলেন। ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তাকে আর দেশে খুঁজেই পায়নি দুদক।
দুদকের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় এবং ঢাকার বাইরে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের নানা নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, ২০১১ সাল থেকে চলতি ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দুর্নীতি মামলার প্রায় শতাধিক আসামি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
যেসব আসামী বিদেশে বলে নথিপত্রভুক্ত হয়েছেন, তারা হচ্ছেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সোলায়মানের স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরিন হাবিবসহ সাত আসামি, যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) শহীদুল ইসলাম পাপুল, শেয়ার খাতের ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি খাজা সোলায়মান আনোয়ার চৌধুরী, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম ছাড়াও ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মোনায়েম খান, জিএম মোহাম্মদ আলীসহ ২০ জন আসামি।
এছাড়া হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ূন কবিরসহ ৫ জন, অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের মালিক শহিদুল ইসলাম, স্টার স্পিনিং মিলসের মালিক আবদুল বাছির, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের মালিক জিয়াউর রহমান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক জাহাঙ্গীর আলমসহ সবমিলে একদশকে একশোর বেশি আসামি বিদেশে পালিয়ে আছেন।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আসামিদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া কঠিন হলেও তবে অসম্ভব নয়। কিন্তু দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম জানান, পলাতকদের দেশে ফেরানো শুধু দুদকের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে না।
বিদেশে অর্থপাচারসহ পলাতকদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে আইনি সহায়তামূলক চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে