একসময় খাল-বিলে প্রচুর পরিমানে শাপলা ফুল দেখা যেত। লাল কিংবা সাদা শাপলা ফুল দেখে মুগ্ধ হন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন বিকাল বেলায় বিলের পাশে ছুটে যেত মন, শুধু বিলের মাঝে কত সুন্দর করে ফুটা শাপলা দেখতে, শাপলা ফুলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিত সাদা সাদা বকের আনাগোনা, মাছরাঙার মাছ ধরার কত না ছবি। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। আর তার সাথে সাথে বিপন্নের পথে জলাভ‚ মির ফল ‘ঢ্যাপ’। শাপলার ফলকেই ‘ঢ্যাপ’ বলা হয়। কিছু কিছু আঞ্চলিক নামে ‘ভেট’ বলা হয়।
একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিরাট একটা অংশ শাপলা ফুলের ডাঁটা তরকারি হিসেবে খেতেন। শুধু তাই নয়, এই ‘ঢ্যাপ’ আমাশয়, বদহজম এবং রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য বেশ কার্যকর বলেও জানা গেছে। কিন্তু ‘শাপলা ফুল’ বা ‘ঢ্যাপ’ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। মাঝে মধ্যে আশাশুনি উপজেলার বাজারগুলোতে ‘ঢ্যাপ’ বিক্রি করতে দেখা যায়।
ভালুকা উপজেলায় একসময় অসংখ্য খাল-বিল ছিল। যেখানে এ ফুল পাওয়া যেত বেশি। এসব খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল ফুটত। এতে পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে ঢ্যাপ। কিন্তু আস্তে আস্তে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বিল। তার সাথে সাথেই হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ। শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে ‘ঢ্যাপের খই’ নামে পরিচিত। এই ঢ্যাপের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়।
আন্ঞলিক ভাষায় শাপলার মুল কে ডেডা বলে থাকে সেই ডেডা দিয়ে চিংড়ি মাছের তরকারি অনেক সুস্বাদু ছিল, আবার ঢ্যাপের পুষ্টিকর চাল থেকে তৈরি করা খই ও মোয়া অত্যন্ত সুস্বাদু। খাল-বিল বিলীন ও জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভ‚ মিগুলো ধ্বংসই এ সুস্বাদু ঢ্যাপ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে উপজেলার অনেকেই মনে করেন।
কৃষক করিম উদ্দিন বলেন যখন আমাদের খুব অভাব দেখা দিত, তখন আমরা শাপলার ঢ্যাপ দিয়ে ভাত ও খই বানিয়ে খেতাম। কিন্তু এখন তো এইগুলো দেখাই যায় না। তাই আজ সরকারের কাছে আবেদন হলো জলাশয় যেন আর ভরাট না করা হয় জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমাদের খাল বিল গুলোকে বাচিয়ে রাখতে হবে।
আনন্দবাজার/শাহী/আনোয়ার