ঢাকা | বুধবার
২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুর যেন-তেন ভাবে সংস্কার রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব ভবন

অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ২৮ লাখ টাকা ব্যায়ে যেন তেন ভাবে সংস্কার করা হলো নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শতবর্ষী রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব ভবনটি। সম্পূর্ণ শিডিউল বহির্ভূত ভাবে কাজ করা হলেও কর্তৃপক্ষ একেবারে নির্বিকার থাকার সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফলে ভবনটির স্থায়িত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে আশংকা। সে সাথে প্রশ্ন উঠেছে নামকা ওয়াস্তে কাজ করে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত সরকারী অর্থ তসরুপের বিষয়ে। কিন্তু ঠিকাদার মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে তার বিরোধীতা করছেনা।

জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠার সময় অফিসারদের চিত্ত বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয় রেলওয়ে অফিসার ক্লাব। শহরের বিমানবন্দরগামী শহীদ ক্যাপ্টেন মৃধা সামসুল হক সড়কের অফিসার্স কলোনী এলাকায় অবস্থিত শতবর্ষী এ ভবনটির অতীত সৌন্দর্য ও অবকাঠামোগত মান অক্ষুণ্ণ থাকলেও ছাদ দিয়ে পানি পড়া ও পলেস্তারা খুলে পড়ার সমস্যা দেখা দেয় কয়েক বছর আগেই।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই রেলওয়ের উন্নয়নে নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। এরই অংশ হিসেবে গত টার্মে সরকার রেলওয়ে কারখানা সংস্কার সহ ট্রেনের মানোন্নয়ন করে। এবার শুরু হয়েছে আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কার কার্যক্রম।

এরই ধারাবাহিতায় চলতি অর্থ বছরে শুরু হয় রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব সংস্কার কাজ। ২৮ লাখ টাকা ব্যায়ে সংস্কার কাজটি করছে পঞ্চগড়ের মেসার্স মোহনা এন্টারপ্রাইজ। প্রথম থেকেই ঠিকাদার মোঃ সাজু আহমেদ ছাদের ঢালাইকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করছে। পাথর নেটিং বা পানি দিয়ে ধোলাই না করেই কাদামাটি, ঘাস, ময়লা আবর্জনাসহ দিচ্ছে মিকচারে। সেইসাথে দেয়া হচ্ছে মোটা বালুর জায়গায় চিকন বালু। শিডিউল অনুযায়ী প্রতি ২ বস্তা সিমেন্টের সাথে ৪ কড়াই বালু ও ৮ কড়াই পাথর এর স্থলে দেয়া হয়েছে ৬ থেকে ৭ কড়াই বালু আর ১০ থেকে ১২ কড়াই পাথর। ব্যবহৃত পাথর যেমন ময়লা কাদাযুক্ত তেমনি সঠিক সাইজের ছিলনা। রড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একইভাবে নিম্ন মানের ও ছাচের মধ্যের দৈর্ঘ্য প্রস্থে গ্যাপের ক্ষেত্রে পরিমানের চেয়ে বেশি দিয়েছে।

এসব অনিয়মের বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) ও অফিসার্স ক্লাবের সভাপতি মোঃ জয়দুল ইসলাম কে জানানো হলে তিনি কার্য তদারকে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি যথাযথ ভাবে দেখার জন্য জানান। এতে মাঝে কাজের মান ভালো করার অভিনয় করে ঠিকাদার ও রেলওয়ে ভূসম্পত্তি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সাংবাদিকরা ওই কাজের দিক থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই তারা আবারও স্বরুপে আবির্ভূত হয়। এভাবেই গোজামিল দিয়ে মূল ভবনের ছাদের ঢালাই শেষ করা হয়।

এখন চলছে ভবনের সাথে লাগোয়া মূল ফটকের উপর নতুন করে গাড়ি বারান্দা তৈরীর কাজ। ১ নভেম্বর রোববার দুপুর ১২ টায় গিয়ে দেখা যায়, গাড়ি বারান্দার ছাদের ঢালাই দেয়া হচ্ছে। ঢালাইয়ের মিশ্রনে পূর্বের মতই মাটি ও আবর্জনাসহ ভেজাল পাথর ও চিকন বালু ব্যবহার করা হচ্ছে অবলীলায়। পাশেই তদারকি কাজে নিয়োজিত সৈয়দপুর রেলওয়ে আইওডাব্লু অফিসের নাইটগার্ড দুলাল হোসেন শার্ট ও গেঞ্জি খুলে উদোম গায়ে রিক্সাভ্যানের উপর শোয়া অবস্থায় মিকচার কাজ দেখছেন। কাদামাটি ও আবর্জনাসহ পাথর দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দুলাল নিশ্চুপ হয়ে শুয়েই থাকেন। পরে মুঠোফোনে উপসহকারী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র কে বিষয়টি জানানো হলে তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে পরিষ্কার পাথর দেয়ার জন্য তাগাদা দেন মিস্ত্রি মজুরদের। অথচ ততক্ষণে ঢালাইকাজ প্রায় শেষ।
তিনি জানান, কাজ ভালই করেছে কিন্তু শেষদিকে আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি তাই হয়তো একটু অনিয়ম করার চেষ্টা করেছে।

এসময় ঠিকাদার মোঃ সাজু আহমেদ’র সাথে তার ০১৭১২২৯৩২৪৫ নম্বরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাথর মাটি মিশ্রিত কিনা তা ইঞ্জিনিয়ার ( কর্তৃপক্ষ) দেখবে। আপনারা দেখার কে? খারাপ উপকরণ দিয়ে কাজ তারা নিয়েছে কেন? তালাশ টিমও যেখানে নাক গলায়না সেখানে সৈয়দপুরের সাংবাদিকদের এতো মাথাব্যথা কেন?

উর্ধ্বতন প্রকৌশলী (সেতু ও ময়দান) মোঃ আহসান উদ্দীন মুঠোফোনে বলেন, শিডিউল দেখে কি করবেন। শিডিউলের বাইরেও কাজ করে নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত কাজের টাকা কি আপনি দিবেন যে কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন। কাজ অনেক ভালো হয়েছে। মাটিযুক্ত পাথর দেয়ার কথা নয়। দিয়ে থাকলে তা ঠিকাদার বুঝবে। এ কথা বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।

আনন্দবাজার/শাহী/মনন

সংবাদটি শেয়ার করুন