ঢাকা | বুধবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের নামে বিভ্রান্তকর অভিযোগ

করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব যেখানে নিশ্চিত খাদ্য সংকটের পথে; ঠিক তখন বাংলাদেশ সম্পর্কে উল্টো তথ্য দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)।

ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন তিন কোটি ৬০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। বিগত আমন, আউশ ও চলতি বোরোর আশাতীত বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে এ বছর চালের উৎপাদন প্রায় ৩৮.৫৪ লাখ টন। বর্তমান মহাপরিচালকের গতিশীল নেতৃত্বে এবং বর্তমানে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, গবেষণা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়াকে পিছনে ফেলে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থান থেকে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক।

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নতুন নতুন উচ্চফলনশীন ধান উদ্ভাবনের এমন সাফল্যের পেছনে যে মানুষটি কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোঃ শাহজাহান কবীর। অথচ এরকম একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তকর তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত সোমবার (২৬ অক্টোবর) কথিত অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ডিজির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন তথ্যাদি ও প্রমাণ যাচাই-বাচাই করে দেখা গেছে বাংলাদশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)‘র ভিতরের এবং বাহিরের একটি মহল চক্রান্ত করে দেশের স্বনামধন্য খাদ্য উৎপাদনকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভ্রান্তমূলক তথ্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির ডিজির বিরুদ্ধে আনিত এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোঃ শাহজাহান কবীর গত ৩১ অগাস্ট ২০১৭ বাংলাদশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। এ পদে যোগদানের আগে তিনি এ ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে ব্রিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করে গত ২৬ বছর ধরে বিভিন্ন পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে অনার্সসহ বিএসসি, ১৯৮৮ সালে এমএসসি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে জিও-স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলিং বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ড. কবীর এদেশের জাতীয় কৃষি গবেষণা সিষ্টেমে (এনএআরএস) এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে জিও-স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলিং বিষয়ে একজন পথিকৃত এবং অন্যতম জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন খ্যতনামা জার্নালে তার ৮৭টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গত দুই দশকের বেশি সময়ে গবষেণা সংশ্লষ্টি কাজে ড. কবীর ফিলিপাইন, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটান, অষ্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিংগাপুর, আমেরিকা, জার্মানী, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।

অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত অভিযোগে ব্রি’র স্কুল ভবনে অনুদানের নামে অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে চিত্রে দেখা গেছে ব্রি’তে ২টি স্কুল আছে। একটি ব্রি প্রগতি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অন্যটি ব্রি উচ্চ বিদ্যালয়। এই ২টি বিদ্যালয়ই গাজীপুরে সেরা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম বিধায় এখানে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। তাছাড়া, সম্প্রতি ব্রিতে পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদন হওয়ায় বাড়তি ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে জানায় উক্ত প্রতিষ্ঠানটি। তদানুযায়ী সকল প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণ করে ডেইলি অবজারভার এবং দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রদান করার মাধ্যমে মেসার্স সুমি ইঞ্জিনিয়ার এন্ড কনস্ট্রাকশনকে নিয়ম মাফিক ব্রি কার্যাদেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে চারতলা বিশিষ্ট নান্দনকি ভবন তৈরি করা হয়। এখানে টেন্ডার ছাড়া কাজ সম্পন্ন করার যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ভবনটি ব্রির ভিতরে তৈরি হওয়ায় সার্বক্ষণিকভাবে ব্রির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মনিটরিং কমিটি, স্কুল কমিটি তদারকি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এছাড়াও ডিজির বিরুদ্ধে মার্চ, ২০২০ আপ্যায়ন বিল বাবদ ৫২ হাজার ৭২৫ টাকা নিয়েও অভিযোগ করা হয়েছে। প্রথমত আপ্যায়ন খরচ নির্ভর করে অতিথির সংখ্যা, গুরুত্ব এবং কতবার ভিজিট করেছে এবং উল্লেখিত মাসে মোট কতটি বিভিন্ন গবেষণা সভা হয়েছে তার ওপর। দেখা গেছে ব্রিতে প্রতিদিনই দেশী/বিদেশী মেহমান দাপ্তরিক কাজে বা পরিদর্শনে আসেন। এছাড়া প্রতিদিনই গবেষণা, পরিকল্পনা, মূল্যায়ন, প্রশাসনিক সভা/কর্মশালা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। তাদের আপ্যায়নের জন্য মহাপরিচালক ও পরিচালক প্রশাসনের দপ্তর থেকে রিকুজিশনের মাধ্যমে ব্রি হোস্টেল শাখা সরবরাহ করে থাকে এবং মাস শেষে এর পরিমাণ কোনো কোনো মাসে লক্ষাধিক টাকাও হয়ে থাকে। এখানে অনিয়ম বা অতিরিক্ত কোনো কিছু হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে এ বিষয়ে প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ এবং বহি:স্থ অডিট হয় এবং তাদের জবাবদিহি করতে হয়। বিভিন্নমুখী গতিশীল কাজের জন্যই ব্রি সফল হচ্ছে বিভিন্ন আধুনিক ধানের জাত এবং প্রযুক্তি কৃষককে উপহার দিতে। তাই আজ ব্রির সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও।

ব্রি একটি স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেইটটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। সে কারণে তৎকালীন মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস ২০১৫ সনে গেইটটি নতুন করে পুননির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার আহ্বান করার মাধ্যমে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মৃণাল হক নামক ফার্মকে ব্রি প্রধান কার্যালয়ের গার্ডরুমসহ মেইন গেইট নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কার্যাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার শর্ত থাকলেও দীর্ঘসময় (প্রায় দেড় বছর) কাজ শেষ না করায় এবং কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না করায় গেইটটি অসমাপ্ত থেকে যায়, এ কথা তাকে বার বার জানানো সত্ত্বেও কাজ শেষ না করেই অগ্রীম বিলের জন্য বিভিন্ন উপর মহল থেকে তদবির শুরু করে। এক পর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে তৎকালীন মহাপরিচালক যতটুকু কাজ হয়েছে ততটুকু বিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তদানুযায়ী বিল প্রদান করা হয়। এর পর মৃণাল হক নামের ওই কনস্ট্রাকশন ফার্ম গেইটের কাজ অসমাপ্ত রেখে কাজ না করে চলে যায়।

অসমাপ্ত গেইটটি সুন্দর হয়নি এবং ব্রির নামের সাথে যায় না বলে সবাই মতামত দেন। এ প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে এই অসমাপ্ত গেইট সমাপ্ত ও মান সম্পন্ন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০২০ সনে যেহেতু ব্রির ৫০ বছরপূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জানিয়েছেন সেহেতু গেইট, বাউন্ডারি ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য ব্রির চত্বরসহ এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় বর্তমান গেইট ঠিক রেখে নতুনভাবে ডিজাইন করে গেইটটি সংস্কার করা হবে এবং তদানুযায়ী ডিজাইন ঠিক করে পত্রিকায় ব্রি প্রধান কার্যালয়ের বাউন্ডারি, ফুটপাত ও গেইট পুননির্মাণ নামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মেসার্স পারভেজ কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে এবং নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। এখানে পুরাতন গেইট ভাঙ্গা হয়নি এবং সরকারের অর্থেরও কোন অপচয় হয়নি বরং ব্রির মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য মানসম্পন্ন সুন্দর একটি গেইট তৈরি করা হচ্ছে, যা সরেজমিনে গিয়ে দৃশ্যমান পাওয়া যায়।

ব্রিতে বাস্তবায়নাধীন “বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভৌত সুবিধাদি ও গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ” শীর্ষক প্রকল্পে পরিচালকের বাসভবন নির্মাণের সংস্থান আছে। সে মোতাবেক পিআইসি সভায় অনুমোদন এবং ব্রি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথাযথ সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে পরিচালকের বাসভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও জানা যায়।

শ্রমসাধ্য কাজের জন্য সম্মানী প্রদান নিয়েও গতিশীল, উদ্যোম এবং কর্মনিষ্ঠ এই মহাপরিচালকের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারী পরিপত্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ন্যায় ব্রিতে কোন কোন সময় শ্রমসাধ্য কাজের জন্য সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর সময়, যখন সবাই নিরাপদে বাসায় থেকে কাজ করেছে সেই সময় কৃষি অর্থনীতি ও কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ ৬টি সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করে সরকারের কাছে রিপোর্ট প্রদান করেছে এবং সে জন্য পরিপত্র অনুযায়ী সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় করোনাকালীন সময়ে ব্রির বিজ্ঞানীদের মাঠে-ঘাঠে অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যই কৃষক বোরো ধান নির্বিঘ্নে ঘরে তুলতে পেরেছে। শ্রমসাধ্য কাজের জন্য উপযুক্ত সম্মনী গ্রহণ বা প্রদান কোনো আইনের ব্যত্যয় নয় বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা।

মহাপরিচালকের গাড়ী ক্রয় নিয়েও অভিযোগ উঠেছে তবে ব্রি মহাপরিচালক গাড়ী প্রাধিকারপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা। সরকারি প্রাধিকার অনুযায়ী সংস্থা প্রধানের রাজস্ব খাতের আওতায় একটি গাড়ীর সংস্থান থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রাজস্ব বাজেট থেকে মহাপরিচালক এর জন্য কোন গাড়ী ক্রয় করা হয়নি। বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত যানবাহন ব্যবহার করে মহাপরিচালক তার দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করে আসছেন। এ প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি প্রেরণ এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর একটি গাড়ী ক্রয়ের অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী পিপিআর ২০০৮ অনুসরণপূর্বক সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একটি গাড়ী ক্রয় করা হয়েছে। তাছাড়া, এ গাড়ী ব্যবহার করার পূর্বে “বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভৌত সুবিধাদি ও গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ” শীর্ষক প্রকল্প থেকে ক্রয়কৃত গাড়িটি বর্তমানে ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন) ব্যবহার করছেন। এখানে একটি গাড়ী থাকা সত্ত্বেও আরেকটি গাড়ী ক্রয় করেছেন এর কোনো সত্য পাওয়া যায়নি।

ব্রি সদর দপ্তর ও এর ১১টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা কাজের পরিধি বিবেচনায় নিয়ামনুযায়ী ১৪১০ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও প্রশাসনিক অনুমোদন আছে মাত্র ৪৪১ জনের। দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা করা হচ্ছে শ্রমিক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কিন্তু এখন পর্যন্ত এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বাস্তবতা হলো- ব্রি সদরদপ্তর ও এর ১১টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের জমিগুলোতে আউশ, আমন, বোরো, তিন মওসুমেই সমান-তালে চাষাবাদ হয়। শ্রমিকের অনুমোদন না থাকলেও বাস্তবতার নিরীখে অনিয়মিতভাবে শ্রমিক নিতে হয়। তা না হলে গবেষণা, বীজ উৎপাদনসহ অন্যান্য কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, যা অন্য কোনভাবেই সামাল দেয়া সম্ভব নয়। তাই গবেষণা বাজেট থেকে বা অন্যান্য বাজেট থেকে দৈনিক শ্রমিকের মজুরি প্রদান করা হয় এবং এ জন্য বছর শেষে বাজেট ঘাটতি দেখা দেয়। এমন এক প্রেক্ষাপটে গোপালগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ নতুন দুটি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় এবং গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়, যেখানে আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধানদের চাহিদা মাফিক সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৯জন এবং গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৬জন অনিয়মিত শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

মহাপরিচালকের ৮তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে। সরেজমিনে তা ভিজিট করা হয়েছে। অভিযোগে ৮ (আট) তলা বাড়ির ছবি দেখিয়ে তা মহাপরিচালকের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বাড়ির ১৬ ভাগের ১ অংশের মালিকানা ডিজির নিজের বলে জানা গেছে।

ব্রির বাসা বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ব্রির পরিচালক (প্রশাসন)। বাসা বরাদ্দ কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ মহাপরিচালক বরাবর পেশ করা হয়। মহাপরিচালক উক্ত সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে তা অনুমোদন করেন। ব্রিতে প্রচুর বাসা খালি পড়ে আছে, বরাদ্দ নেওয়ার কোনো প্রার্থী নেই। তা শর্তেও বাসা বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ ব্যাপারেও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ্যে অনইচ্ছুক ব্রির এক কর্মকর্তা জানান, ব্রি’ই সম্ভবত প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান যেখানে সকল বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী দফায় দফায় সভা, আলোচনা, পর্যালোচনা করে গত ৯/১২/২০১৭ তারিখ আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসে সবাই শপথ পাঠ করে এবং মহাপরিচালকের দপ্তরের সামনে ‘‘আমি এবং আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত” ঘোষণা টানানো হয়। ব্রিতে প্রতিপদে এই চর্চা অব্যাহত আছে। অথচ এমন একটি প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা অত্যন্ত পীড়াদায়ক, অপমানকর এবং একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। ব্রির মহাপরিচালক সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। সবাইকে উনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। মহাপরিচালকের অফিসে সবার সহজ প্রবেশাধিকার রয়েছে। অতএব, উনার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রি’র গবেষণার উদ্দেশ্য ছিলো অল্প জমি থেকে বেশি পরিমাণ ধান উৎপাদন করা। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোই ছিলো তখনকার মূল লক্ষ্য। বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা ও রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরু-সুগন্ধি এবং রপ্তানির উপযোগী প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জাত উদ্ভাবনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ব্রি। স্থানীয় জাতের পরিবর্তে ব্রি নিয়ে এসেছে উচ্চফলনশীল সুগন্ধি ধানের জাত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে সরু-সুগন্ধি ধান। কারণ এই ধান চাষে সমান শ্রমে বেশি লাভ, রয়েছে দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ধান, রক্তশূন্যতা ও ডায়রিয়া রোগীদের বিশেষ উপকারী জিংক সমৃদ্ধ অবমুক্ত করার ফলে দেশের অন্নদাতা প্রতিষ্ঠান ব্রি এখন বিশ্বব্যাপি পুষ্টিদাতা প্রতিষ্ঠান হিসাবেও পরিচিতি পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠিত হয়, তখন খাদ্য ঘাটতি ছিলো ২৬ লক্ষ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ও আনুষঙ্গিক লাগসই চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষক পর্যায়ে এসব প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে ২০১৩ সালে এসে দেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি, খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত চাল বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। এটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক অসামান্য অর্জন। এই নীরব বিপ্লবের পিছনে বর্তমান মহাপরিচালকের গতিশীল নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বর্তমান মহাপরিচালক দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে উদ্ভাবিত করেছেন ব্রি ধান৭৮, ব্রি ধান৭৭, ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৫, ব্রি হাইব্রিড ধান৫, ব্রি ধান৮৬, ব্রি ধান৮৫, ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান৮৩, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৭৯, ব্রি হাইব্রিড ধান৬, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯০, ব্রি ধান৯১, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪, ব্রি ধান৯৫, ব্রি ধান৯৬, ব্রি ধান৯৭, ব্রি ধান৯৮, ব্রি ধান৯৯; বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি, ধান উৎপাদনের ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি, ইনোভেশন টিম, অভ্যন্তরীণ ই-সেবা চালু করা, ব্রি রাইটার্স পুল সৃষ্টি করা, ব্রি রাইস ডক্টর, মোবাইল অ্যাপস চালু করা, রাইস পেস্ট কর্ণার সৃষ্টি করা, অর্থবছর ভিত্তিক ডাটাবেজ, অঞ্চল-ভিত্তিক আউশ ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি, আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়, ধানের ডাটাবেজ, ব্রি উদ্ভাবিত ধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ, ধান ভিত্তিক মানচিত্র, ধানের বর্ষপঞ্জিকা ইত্যাদি অন্যতম। এই উদ্ভাবনে মহাপরিচালকের গতিশীল নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

এ ব্যাপারে মহাপরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোঃ শাহজাহান কবীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রি’র গবেষণার উদ্দেশ্য ছিলো অল্প জমি থেকে বেশি পরিমাণ ধান উৎপাদন করা। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোই ছিলো তখনকার মূল লক্ষ্য। বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা ও রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরু-সুগন্ধি এবং রপ্তানির উপযোগী প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জাত উদ্ভাবনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ব্রি। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং ষড়যন্ত্রমূলক বেনামী পত্রের অভিযোগের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আশা করছি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাছাড়া বস্তুুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে ব্রির মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ভাবমূর্তি রক্ষা এবং গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ অব্যাহত রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন।

আনন্দবাজার/শাহী/হিমেল

সংবাদটি শেয়ার করুন