ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

বছর ঘুরে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখো ভক্তকে ভারাক্রান্ত করে দোলায় চড়ে বিদায় নিলেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। করোনার সংক্রমণ কারণে পুণ্যার্থীদের জন্য এবার পরিবেশটা বেশ প্রতিকূল।

অন্যান্যবারের মতো উৎসবে ভাটা দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সোমবার সন্ধ্যায় আত্রাই নদীর তীরে ‘দুর্গা মা কি, জয়। মহামায়া কি, জয়।’ একের পর এক এমন জয়ধ্বনি, ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। বিকেলে বিজয়া দশমীর পূজা অর্চনা ও সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দুপুরের পর থেকে মন্ডপগুলোর প্রতিমা যানবাহনে করে নৌকায় তোলা হয়। উপজেলা সদর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু প্রতিমা নৌকায় করে আত্রাই ছোট যমুনা নদীতে আনা হয়। প্রতিমাবাহী নৌকা ছাড়াও ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনসমূহের শত শত নৌকা নদীতে ভাসানো হয়। প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে চলতে থাকে নৌবিহার।

এ সময় অনেক ভক্ত কান্নায় ভেঙে পড়েন। সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে দেবী বিসর্জনের লগ্ন শুরু হয়। ফলে সকাল থেকেই মন্ডপে মন্ডপে নামে ভক্তদের ঢল। এসময় মন্ডপে মন্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, মন্ত্রপাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, নাচ, সিঁদুর খেলা হয়। মুখরিত হয়ে ওঠে মন্ডপ প্রাঙ্গণ। ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা।

একদিকে বিদায়ের সুর, অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। সকালে দেওয়া হয় দর্পণ ঘট বিসর্জন। এমনই আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন স্বামীগৃহে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সব অপশক্তির বিনাশ হবে। শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে যাবে সবখানে।

প্রথা অনুযায়ী, প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে শান্তির জল মঙ্গলঘটে নিয়ে তা হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তির জল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমার সম্মুখে রেখে পূজা করা হবে। দৈনন্দিন জীবনের বাঁধা হিসেবে আবদ্ধ বাঙালি আসলে পূজার চার দিনে মুক্তির ছোঁয়া পায়। সারা বছরে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে ডানাগুলো এদিক-ওদিক থেকে বেরিয়ে আসে। খুশিয়াল মেজাজে ভর করে তাদের চার দিন অবাধ ওড়াউড়ির সমাপ্তি হলো সোমবার। আবার তাদের গুটিয়ে যাওয়ার পালা। এবার ফিরে চলা প্রতীক্ষার কাছে। তবে মনের মধ্যে অবিরাম ঢাকের বাদ্যি জানান দিয়ে যায় আসছে বছর আবার হবে।

এ উপলক্ষে আত্রাই নদীর দুই পাড়সহ পুরো এলাকাজুড়ে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দীর্ঘ সময় নৌবিহার শেষে সন্ধ্যায় উপজেলার সুটকিগাছা রাবারড্রাম সংলগ্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হয়। শান্তিপূর্ণভাবে এ বছরের মতো শেষ হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উপলক্ষে সেখানে বসে গ্রামীণ মেলা।

উল্লেখ্য, এ বছর আত্রাই উপজেলায় মোট ৪৭টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আনন্দবাজার/শাহী/নাহিদ

সংবাদটি শেয়ার করুন