ভয়াবহ ভূমিকম্পের ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। বিগত চার’শ বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাংশে দুটি ভূ-গাঠনিক প্ল্যাটে শক্তি সঞ্চয়ের কারনেই এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট।
জানা গেছে, ৮/৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে যেতে পারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহর। তবে বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন নেচার জিও সায়েন্স জার্নালে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এই বিজ্ঞান সাময়িকিতে জানানো হয়, অনেকদিন ধরে ভূ-গাঠনিক প্ল্যাটে শক্তি সঞ্চয়ের ফলাফল হল ভূমিকম্প। ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা-এই তিনটি গতিশীল ফ্ল্যাটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ ভয়ঙ্করভাবে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক হুয়ায়ূন আখতার জানান, পূর্ব-পশ্চিমে আড়াইশ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে অধিক পরিমাণে শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। মডেলে আমরা দেখেছি ৮.২ থেকে ৯ মাত্রা ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি সেখানে রয়েছে।
ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী প্লেট এবং সাব-প্লেট দিয়ে গঠিত। এ ধরনের দুটি প্লেটের মাঝখানে যে ফাঁক থাকে তাকে বলা হয় ফল্ট লাইন। তবে প্লেটগুলো গতিশীল। এই চলন্ত দুটি প্লেটের ফল্ট লাইনে পরস্পর সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।আর বাংলাদেশ অবস্থান করছে ভারতীয়, ইউরেশীয় ও মিয়ানমারের টেকটনিক প্লেটের মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, দেশের বাইরে এবং ভেতরে ভূমিকম্পের ব্যাপক উৎস থাকায় যে কোনো সময় বাংলাদেশে ভয়ংকর ভূমিকম্প হতে পারে। আমাদের ঢাকা একটি অপরিকল্পিত ও জনবহুল নগরী। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান ভূমিকম্পের উৎস থেকে ৫০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, পাকা বিল্ডিং যত হবে, এবং সেটার যদি গুণগত মান ঠিক না থাকে তাহলে মানুষ হতাহতের সম্ভাবনা বেশি। সেইসাথে রিপোর্ট বলছে, আমরা ৯০ শতাংশ দুর্বল মাটিতে বিল্ডিং তৈরি করি।
তাই বর্তমানে ভবন নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পাশাপাশি নতুন ভবন নির্মাণে নিয়ম সঠিকভাবে মানার নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। সেই সাথে জনসাধারণের মধ্যে ভূমিকম্প নিয়ে আতংকিত না হয়ে, সচেতনতা গড়ে তোলার পরামর্শও দেন তারা ।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে
