ঢাকা | রবিবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সান্তাহারে নেসকো’র অনিয়মের ঝড়, ভোগান্তিতে সাধারণ গ্রাহক

নওগাঁর পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও অনিয়মের ঝড়ে ভোগান্তি বেড়েছে গ্রাহকদের। করোনাকালীন সময়ে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আসায় গ্রাহকদের যেন ‘মরার উপর খারার ঘা’। মিটার রিডিং, ইস্টিমেট, অকেজো মিটার, লাইন সংযোগ ও বিচ্ছিন্নসহ নানা অনিয়মে অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অনিয়মের দায় চাপছে গ্রাহকদের কাঁধে। এতে ভোগান্তিতে শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক। কোন বিকল্প উপায় না থাকায় সাধারণ মানুষ যেনো বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতেন সিরাজুল ইসলাম খান। হঠাৎ স্বাভাবিকের তুলনায় বিল দ্বিগুণ আসতে শুরু করে। অফিস থেকে লোক এসে দেখে মিটার অকেজো। পরদিন অফিসে অভিযোগ করার পর মিটার পরিবর্তন করে দেয়া হয়। অকেজো মিটার রিডিংয়ে ১৯ হাজার টাকার মতো বিল থাকায় পরিশোধ করতে বলা হয়। অফিসের এমন কথা শুনে চোখ কপালে উঠার উপক্রম হয় আদমদীঘির উপজেলার দমদমা গ্রামের গ্রাহক সিরাজুল ইসলাম খানের।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মিটার অকেজো হলে গাণিতিক ভুলে লক্ষ টাকাও আসতে পারে। বাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দুটি ভিন্ন ইস্টিমেট। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিল ১৯ হাজার টাকা বাকি থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু বাড়ির বিল পরিশোধ থাকা সত্বেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিবে বলে হুমকি দেয়া হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ একের পর এক অনিয়ম করেই চলেছে যা দেখার কেউ নেই। এমন অভিযোগ সিরাজুল ইসলামসহ শত শত গ্রাহেকের।

অফিসের তৈরী করা নিয়েমে গ্রাহকদের হয়রানি ও ভোগান্তির সীমানা চরম পর্যায়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও কোন সমাধান হয় না। বরং উল্টো বুঝিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়। নেসকো কর্তৃপক্ষের ভোগান্তি থেকে পরিত্রান পেতে চান গ্রাহকরা। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন গ্রাহকরা।

সান্তাহার পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের আবুল হোসেন আবু বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার অকেজো হওয়ায় সহকারী প্রকৌশলী রেজানুর ইসলামকে অভিযোগ দিলে তিনি বলেন বিষয়টা দেখছি। পরে ২/৩ মাসেও মিটার পরিবর্তন করে দেওয়া হয়নি। তারপরও তিনি তাদের ইচ্ছা মতো বিল পরিশোধ করেছেন। কিন্তু বিল পরিশোধ থাকা সত্বেও মিটার অকেজো হওয়ার কারনে বিদ্যুৎ বিভাগের লোক এসে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং মিটার পরিবর্তন করেননি। বরং উল্টো হুমকি দেন। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানের সঙ্গে ভুক্তভোগী কথা বলতে গেলে সমাধান না দিয়ে বরং খারাপ আচরণ করেন আর রেগে গিয়ে বলেন আমার রুমে কাউকে যেন প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়। এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

পোঁওতা এলাকার নেহাল আহম্মেদ বলেন, বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন হলে অফিসে অভিযোগ দিলে তারা বলেন অন্য বাড়িগুলোতে ৪/৫ দিন ধরে লাইন নাই। আপনার বাড়িতে এক দিন নাইতো কি হইছে। লাইন ম্যান এখন ব্যস্ত। পরে ঠিক করতে আসলে কাজের শেষে খরচ চাই।

চা-বাগানের বাসিন্দা হীরা বলেন, বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে থাকায় তার বাড়িতে গত চার মাস থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের লোক যেতে পারেনি। মিটার ইউনিটের সাথে বিদ্যুৎ বিলের কাগজে কোন মিল নেই। গত তিনমাস আগে স্বাভাবিক বিলের পরিমাণের থেকে বর্তমানে দ্বিগুণ হারে বিল আসছে। ধার দেনা করে পরিশোধ করে আসছি। বিল না দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিবে বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন।

পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ডের এক ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে তিনিও বলেন, প্রতি মাসে বিল আসতো ৭-৮শ টাকা। গত দুই মাসে ধরে বিল আসছে ১৮শ থেকে ১৯শ টাকা। সাধারণ পরিবারে থাকায় আয় রোজগার তেমন হয় না। সব টাকা যদি বিল দিতে হয় তাহলে খাবার আর সংসার চলবে কি করে। বিদ্যুৎ বিল যেনো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সান্তাহার নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রোকনুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

 

আনন্দবাজার/ইউএসএস/নআঅ

সংবাদটি শেয়ার করুন