বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৭ বছরের সাংবাদিকতায় একটি ক্যামেরা কেনার সামর্থ্যও হয়নি

জয়পুরহাট সীমান্তে অবৈধ চোরাকারবারীদের আতংকের নাম এক সময়ের তু’খোর সাংবাদিক প্রদীপ অধিকারী। বর্তমানে একাকীত্ব চলছে তার জীবন সংসার। তার সাংবাদিকতার ২৭ বছরে ক্ষুরধার লেখনি এলাকার অনেক উন্নয়ন ও বহু অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তিনি বলেন তার এই দীর্ঘ সময়ের সাংবাদিকতার আলোকে অনেক নবীন প্রবীন সাংবাদিক সাংবাদিকতা পেশাকে পুঁজি করে অনেক অর্থ ভৈরবের মালিক বনে গেছেন।

তিনি ১৯৬২ সালে জয়পুরহাট জেলার সীমান্তবর্তী পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নে বাগজানা গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত ভবেশ চন্দ্র অধিকারী। ১৯৯৩ সালে বগুড়া থেকে প্রকাশিত তৎকালীন উত্তরবঙ্গের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আজ ও আগামীকাল পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতার জীবনের শুরু।

বর্তমান সময়ে পত্রিকায় নিউজ পাঠানোর মত তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সাদা কাগজে নিউজ লিখে ১০/১২ কিলোমিটার পথ হেটে বা সাইকেল চালিয়ে পাঁচবিবি হিলিতে যেতে হত ফ্যাক্স করতে। পরদিন ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত পত্রিকার জন্য। এভাবেই চলত সে সময়ের সাংবাদিকতা। কিন্তু কোন দিন কারো নিকট নিউজ করার জন্য ১০ টি টাকা হাত পেতে নেয়নি। যারা নিজ ইচ্ছায় হাতে ২/১ শত টাকা ধরে দেয় তা নিয়েই তিনি সন্তেষ্ট থেকেছেন। ২৭বছরের সাংবাদিকতা জীবনে আজ পর্যন্ত তার একটি ক্যামেরা কেনার সামর্থ্য হয়নি।

অথচ সে সময় সাংবাদিকতার মধ্যে অনেক লোভনীয় অফার ছিল। কিন্তুু তার পারিবারিক দারিদ্রতা ও অস্বচ্ছলতার মাঝেও কখনও কারো কাছে মাথানত করেননি। তার ক্ষুরধার লেখনিতে এক নামে সবাই তাকে চিনত। সাংসারিক জীবন দুঃখ অনাহারে অর্ধাহারে কাটালেও থেমে থাকেনি তার কলম। পিতার সম্পদ বলতে কিছুই নেই। মামাদের দানকৃত একটুকরো জমিতেই স্ত্রী, ১ পুত্র, ২ কন্যা নিয়ে বসবাস।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

তিনি শত অভাব অনটনের মাঝেও বড় মেয়েকে অতিকষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েকে পড়িয়েছেন ডিপ্লোমা ইন ফিশারিস পর্যন্ত। ছেলেকেও পড়িয়েছেন। সে এখন একটি কোম্পানিতে চাকরির করছেন। ছেলের বেতনের টাকায় কোন রকমে সংসার চলে আসছে। দুস্থ অসহায় দরিদ্র পরিবারের জম্ম নেওয়া সৎ ও নির্ভিক এই কলম সৈনিক সেই ১৯৯৩ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন। এ পেশায় থেকে কোন দিন কোথাও সাংবাদিকতা ক্ষমতার বড়াই দেখিয়ে টাকা উপার্জন করেনি, ফলে সাংবাদিকতা পেশা চালাতে গিয়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।

বয়সের বাড়ার কারণে পূর্বের মত সংবাদের পিছনে ছুটতে না পারলেও এই পেশাটাকে তিনি ছাড়তে পারেন নি। এখন ভাঙ্গা জোড়া মোবাইল সেট দিয়ে (ইদানিং) ছবি তুলে সংবাদ পরিবেশন করে আসছেন। এখন সাংবাদিকতা পেশা তাকে নেশায় পরিনত করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ডেলটা টাইমস পত্রিকায় পাঁচবিবি প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছেন।

আনন্দবাজার/শাহী/বাবুল

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন