নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিপীড়ন ও সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নারীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের বিচার চেয়ে প্রতিবাদী শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে সারা দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ, ধর্ষকদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে সভা সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে ২০১৮ এর আলোড়ন সৃষ্টিকারী স্বাধীনতাত্তর বৃহত্তম ছাত্র আন্দোলন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের তরুণরা।
আজ (৭অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ১১ টায় সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ও সচেতনমহল কর্তৃক প্রতিবাদকর্মসূচির আয়োজন করে নিসআ। উক্ত আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন-(নিসআ) এর যুগ্ম আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীদুল ইসলাম আপন। সারাদেশে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে দেশবাসির প্রতি আহ্বান জানান এই ছাত্র নেতা।
আন্দোলনে অংশ নেয়া সমাজকর্মী নাফিসা আঞ্জুম খান বলেন, আমি চাই শুধু নিরাপদ সড়ক আন্দোলন না সবাইকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে, আওয়াজ তুলতে হবে। না হয় দিন দিন নতুন নতুন ধর্ষকের জন্ম হবে, মুজিবের দেশ হবে ধর্ষকের দেশ।
বাংলার মাটিতে ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি কার্যকর করতে হবে এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইনজামুল হক ধর্ষণরোধে কার্যকর আইনপ্রণয়নের আহ্বান জানান। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সারাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে।
উক্ত দাবিসমূহঃ
১. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে সংসদে নতুন আইন পাশ এবং তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সারাদেশে জরুরি হটলাইন সেবা চালু করতে হবে।
৩. ধর্ষণের মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অভিযোগ গ্রহণ থেকে শুরু করে তদন্ত প্রক্রিয়ায় অবশ্যই অন্তত একজন মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।
৪. ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের নামে হয়রানিমূলক অভিযোগ ও মামলার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বাদীর নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।
৬. প্রশাসনিক মহলের কেউ ধর্ষণের মতো অপরাধকে প্রশ্রয় দিলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. সর্বোপরি উপরোক্ত দাবিসমূহ নিশ্চিতকরণে সরকারপ্রধানকে লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে এবং দাবিসমূহ যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে একটি কমিটি গঠন করতে হবে, যেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কর্মসূচি শেষে সংঘঠনটি দেশজুড়ে ধর্ষণের প্রকোপ হওয়ায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপারগতা ও বিচারহীনতার অবসানে প্রধানমন্ত্রীর নিকট সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে।
এ সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারিন তাসনিম আর্নিকা, সমাজকর্মী সাহিদ আহমেদ সহ বিভিন্ন মহলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী সহ সচেতন নাগরিকবৃন্দ। প্রতিবাদকর্মসূচী শেষে শিক্ষার্থীরা র্যালি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাত্রা করে এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লিখিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দাবি পেশ করে।
আনন্দবাজার/এম.কে