এক সময় বিশ্ব বাজারে দেশের সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী। কৃষিতে উৎপাদিত পাট ও পাটজাত পণ্য সে সময়ে রফতানি করে আসতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু বিভিন্ন কারনে বর্তমানে বহিঃবিশ্বে পাটের ঐতিহ্য খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত। দাম কম পাওয়ায় কৃষকেরা কমিয়ে দিয়েছে পাটচাষও। ফলে পাটকলগুলোর সার্বিক অবস্থাও নেই আগের মত।
সম্প্রতি পাটের ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে ধরে রাখতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামে স্থাপিত এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি পাট দিয়েই তৈরি করছে নানা ডিজাইনের জুতা। এখান থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার পিয়ার জুতা রপ্তানি করা হচ্ছে স্পেন, ইতালি জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে। পাটের সুতায় হাত ও মেশিনে নকশা করা বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা বিশ্বের সৌখিন মানুষের কাছে চাহিদা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশের জুতার ফ্যাশন শোতেও এই জুতা একাধিকবার প্রদর্শিত হয়েছে বলে দাবি প্রস্ততকারী কোম্পানীর। এমন মফস্মল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর রপ্তানীযোগ্য জুতা তৈরিতে এ এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক হতদরিদ্র অসহায় নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
কোম্পানির কর্তা ব্যক্তিদের ভাষ্য, সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এ পরিবেশবান্ধব জুতার রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এই ব্যাপারে এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিডেট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়দুল হক রাসেল বলেন, ২০১৬ সালের দিকে সরকারি সকল নিয়ম মেনে কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের রঘুনাথপুর মাঠের মধ্যে মাত্র ৪৪ শতক জমির ওপর পাটের জুতা তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। গ্রামাঞ্চল হওয়ায় প্রথম দিকে নানা প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। ২০১৭ সাল থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর বায়াররা বেশ চাহিদার সাথে এ জুতাগুলো কিনে নিচ্ছেন।
এর আগে কোম্পানীর পক্ষ থেকে পাটের তৈরি জুতার বিশ্ব বাজার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দেশের মেলায় জুতার স্টল দিয়ে বায়ারদের নজর কাড়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ফ্যাশান শো ও মেলায় তাদের তৈরিকৃত সু প্রথম প্রদর্শিত হয় এবং সমাদৃত হয়। ওই বছরেই আমেরিকার লার্স ভেগাস ও ২০১৯ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত মেলায় কোম্পানির পক্ষ থেকে পাটের তৈরি জুতার স্টল দিয়ে বায়ারদের দৃষ্টি কাড়ার পর পাটের জুতার বিশ্ববাজারে চাহিদা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
ওবায়দুল হক রাসেল আরও জানান, তার ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত জুতা তিনি ২ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত দামে বিশ্ব বাজারে বিক্রি করে থাকেন। চাহিদার কারণে ২ ডলারের জুতা বিদেশে ১৫ থেকে ২০ ডলারে পর্যন্ত বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, নিজেই বিশ্ববাজারে এই জুতার মার্কেটিং করে থাকেন। সরাসরি বায়ারদের সাথে কথা বলে তাদের মালামাল রফতানি করে থাকেন।
এম বুরহান উদ্দীন
Attachments area