ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫০ বছর অপেক্ষা করেও মিললো না একটি সেতু

গাজীপুরের দুই উপজেলা শ্রীপুর ও কাপাসিয়া এবং গোসিঙ্গা ইউনিয়ন কে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে শীতলক্ষ্যা নদী। নদীর পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থান দরদরিয়া। মায়াভরানো গ্রামটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বেশ ভালোভাবেই। তবে দুই উপজেলার সংযোগস্থলে একটি সেতুর জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি ৫০ বছরেও।

তাদের দাবি, প্রতিটি সরকারই এসে সেতুর আশ্বাস দেয় কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি কেউ। ফলে কয়েক লাখ মানুষের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে; তেমনই উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতাও তৈরি হচ্ছে।স্থানীয়রা জানান, নদীর পশ্চিম পারে শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়ন ও পূর্ব পাশে কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়ন। নানা কারণে দুটো ইউনিয়নের ১০ গ্রামের প্রায় হাজারো মানুষ প্রতিদিন এপার-ওপারে যাতায়াত করে।

এছাড়াও শ্রীপুরের শিল্প-কারখানাগুলোয় কাপাসিয়া উপজেলার প্রায় হাজারো মানুষ চাকরি করে। তবে তাদের যাতায়াতের পথে দীর্ঘদিনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে শীতলক্ষ্যা নদী। এ নদীতে কোনো সেতু না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেন অনেকটা থমকে আছে। রায়েদ গ্রামের আমিনুল ইসলাম শিক্ষকতা করেন গাজীপুর সদরের বাঘেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন নদী পার হয়ে তাকে যাতায়াত করতে হয়।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো এলাকার উন্নয়নের প্রধান ভূমিকা রাখে যোগাযোগব্যবস্থা। দুই উপজেলার সংযোগস্থলে একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সংযোগস্থলে সেতুর অভাবে বিশেষ করে কাপাসিয়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের উন্নয়ন থমকে আছে। একটি সেতু নির্মাণ হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে উন্নয়নের ক্ষেত্রে।’

দরদরিয়া বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সেতু নির্মাণের বিষয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই শুধু আশ্বাস পাচ্ছি। সেতু নির্মাণ হয়নি। শীতলক্ষ্যার উপর সেতু নির্মাণ হলে খুব সহজেই মাওনা-শ্রীপুর সড়ক কিশোরগঞ্জ হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সংযুক্ত হতে পারে। সেতু নির্মাণ হলে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকাসহ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। তাই এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।’

গোসিঙ্গা খেয়াঘাটের মাঝি আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘প্রতিদিন হাজারের উপর লোক এখান দিয়ে নানা প্রয়োজনে নৌকায় পারাপার হয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে লোকজনের চাপ বেড়ে যায়। তখন পার হতে লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়াও রাতের বেলা খেয়া পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই।’শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান সরকার বলেন, ‘ওপারের কাপাসিয়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের লোকজন বিশেষ করে শ্রীপুরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। কেননা কাপাসিয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব বেশি। গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও শ্রীপুরকে ঘিরে। ওপার থেকে বহু শিক্ষার্থী শ্রীপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। সেতু না থাকায় খেয়া পারাপারে যেমন অতিরিক্ত সময় ব্যয় ও ঝুঁকিতে পড়তে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।’

রায়েদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম হিরণ বলেন, ‘কাপাসিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এখনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এলাকার মানুষ কৃষিকাজকে প্রধান জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় সেতু না থাকায়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে দুটি উপজেলার মানুষের যেমন প্রতিবন্ধকতা দূর হবে; তেমনই কাপাসিয়ার বিভিন্ন এলাকাসহ পাশের কিশোরগঞ্জের লোকজনের রাজধানীর সাথে যোগাযোগ স্থাপনে দূরত্ব কমবে।’

কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, ‘এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য দুই উপজেলার সাংসদগণ দীর্ঘদিন ধরেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে এ মেয়াদেই সেতু নির্মাণ হওয়ার কথা। আশা করা যায়, এতে দুটি উপজেলার উন্নয়নে ভিন্নমাত্রা আনবে।’

আনন্দবাজার/শাহী/মহিউদ্দিন

সংবাদটি শেয়ার করুন