টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জের বন বিভাগের জায়গায় অবৈধ ভাবে পোল্ট্রি খামার নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের শালিয়াবহ (নয়াপাড়া) গ্রামের গাজীউর রহমান (গাজী রাজাকার) ও তার ছেলে মোস্তাফা প্রভাব খাটিয়ে বনের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে পোল্ট্রি খামার চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও সরকারি রাস্তা নষ্ট করে পুকুর কাটার অভিযোগও পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। বেআইনী ভাবে পোল্ট্রির বর্জ্য ড্রেনের সাহায্যে ছড়িয়ে পরছে এলাকা জুড়ে। ফলে বিভিন্ন অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশু সহ সকল বয়সের নারী পুরুষ।
এদিকে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাদের কিছু বলার সাহস পায়না। দুএকজন প্রতিবাদ করে তাদের সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হলে, এখন আর কেউ প্রতিবাদ করে না। সরকারি বনের জায়গায় তাদের প্রায় দশ হাজার মুরগির খামার রয়েছে। সবগুলোই নির্মাণ করা হয়েছে বেআইনি ভাবে।যার ফলে বিপন্ন হচ্ছে এই এলাকার মানুষের জীবন যাপন।
মোস্তফার চাচাতো ভাই ও স্হানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, এমনিতেই মুরগির বর্জ্য এলাকায় ছড়িয়ে দুর্গন্ধ ও অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে। তারপরও আবার প্রতিহিংসা বশত আমার বাড়ি ঘেঁষে নতুন করে আরেকটা খামার করছে। প্রতিবাদ করলে বন বিভাগের মামলার হুমকি দেয়। এর আগে বেশ কয়েক বার আমার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় আমি ও আমার পরিবারের উপর নির্যাতন ও জিনিস পত্র লুট করে নিয়ে যায়। ওদের ভয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করে না। আমার দুই ছেলে দেশের বাইরে থাকে। আমি স্ত্রী,ছেলের বৌ আর দুই নাতি কে নিয়ে আতংকে আছি।
স্থানীয় বাসিন্দা বন্দে আলী বলেন, আমরা কামলা মানুষ। অন্যের কাজ করে খাই। হাত পা হারালে না খেয়ে মরতে হবে। তাই এবিষয়ে কিছু বলতে চাইনা।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আঃ হামিদ বলেন, গাজী রাজাকার ও তার ছেলের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। সাধীনতার সময়ও দেশের বিরুদ্ধে ছিলো এখনো তাদের স্বভাব চরিত্র তেমনই আছে। তদের কারনে এলাকার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। সুযোগ সন্ধানী হওয়ায় যখন যেদল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছায়া তলে চলে আসে।এদের অত্যাচার থেকে নিরীহ মানুষকে রক্ষা করতে প্রশাসনের দ্রুত সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোস্তফা বলেন, দীর্ঘ১৪ বছর যাবত এভাবেই ব্যবসা করে আসছি। কেউ আমার কিছুই করতে পারেনি। কাকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় তা আমার জানা আছে। তাছাড়া এলাকায় অনেকেই বনের জায়গায় খামার করেছে। সবার সবকিছু দেখা যাবে না বলে এ প্রতিবেদককে সাবধান করেন
স্থানীয় ইউপি সদস্য কুদরত আলী বলেন, আমি তাদেরকে বারবার সাবধান করলেও ওরা আমার কোন কথা শোনেনি। তাই আমি আর কিছু বলে শত্রুতা বাড়াতে চাইনি। তবে রাস্তা কেটে পুকুর নির্মাণ করার বিষয়টি চেয়ারম্যান কে জানিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমদাদুল হক সরকার বলেন, বনের জায়গা দেখভাল করার দায়িত্ব বন কর্মকর্তাদের। তবে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করার জন্য আমি তাকে সাবধান করলেও সে শোনেনি। এজন্য ভুক্তভোগীদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিতে বলি। সরকারি রাস্তা কেটে পুকুর নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। সে এজন্য ভুল স্বীকার করে রাস্তা মেরামত করার কথা বলে কিছুদিন সময় চায়। সেটা তাও এক বছর আগের কথা। তারপর আর এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। তবে রাস্তাঘাট রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে আবার নতুন করে বনের জায়গা দখল করে ঘর তোলায় স্হানীয় বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাদের ধারণা যেখানে নিজের বাড়িতে একটা ল্যাট্রিন করতে গেলেও তাদের ম্যানেজ করে তবেই সম্ভব হয়। সেখানে এতোদিন ধরে এতো বিশাল এরিয়া দখল করে রেখেছে। আবার নতুন করে আরেকটা খামার করছে তারা দেখেও দেখেনা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, এমন কোন অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি বিট অফিসার পাঠিয়ে খোঁজ নেবো। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে জরিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
আনন্দবাজার/শাহী/সোহেল