ঢাকা | বুধবার
২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌদিতে সম্ভ্রম না দেওয়ায় প্রাণ গেল বাংলাদেশির কিশোরীর

সৌদিতে সম্ভ্রম না দেওয়ায় সম্প্রতি লাশ হয়ে ফিরল ১৩ বছরের কিশোরী কুলসুম। জানা গেছে, ওই কিশোরীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে।  সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার আশায় প্রায় ১৭ মাস আগে কুলসুমকে পাঠানো হয় সৌদি আরবে। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে কুলসুমের লাশ দেশে আসে। পরদিন এলাকার কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। গত ৯ আগস্ট সৌদি আরবের কিং ফয়সাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় কুলসুম।

কুলসুমের সাথে মালিকের ছেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে চায়। এক কথা দুই কথায় কুলসুমের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। নিপীড়নের পর ফেলে রাখা হয় বাড়ির বাইরে। পুলিশ কুলসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এক ভিডিও কলে দেখা গেছে, হাসপাতাল থেকে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলছে উম্মে কুলসুম। মালিক তাকে নির্যাতন করে পা ভেঙে দিয়েছে বলে তাই সে আর হাঁটাচলা করতে পারছে না। ওই ভিডিও কলে সে কোমর থেকে নীচের অংশের আঘাতের চিহ্নও দেখায়।

 ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিতে যায় সে। প্রথমে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কুলসুমকে সৌদিতে পাঠানো হয়। পরে আরও ভালো বাড়ি দেওয়ার কথা হলে কুলসুমের বাবার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু কুলসুমের লাশ আসার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক।

কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ওই সনদপত্রে কুলসুমের জন্ম তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০০৬ সাল লেখা। কিন্তু তার পাসপোর্টে জন্মতারিখ উল্লেখ আছে ১৩ মার্চ ১৯৯৩। ৭ মার্চ ২০১৯ ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক অফিস থেকে পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়। এবং ভিসা ইস্যু হয় ২০ মার্চ।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, সৌদি আরবের বাড়ির মালিক ও তার ছেলে কুলসুমের দুই পা, হাত ও কোমর ভেঙে দেয়। নষ্ট করে ফেলে একটি চোখ। এসব নির্যাতনের কথা জেনে স্থানীয় যে ব্যক্তির মাধ্যমে পাঠানো হয় তাকে ব্যাপারটি অবহিত করা হয়। সে সময়ে তিনি কুলসুমকে অন্য বাড়িতে দেবেন বলেও আশ্বস্ত করেন। ঢাকার এজেন্টও একই কথা জানান। কিন্তু ওই এজেন্টের লোকজন এক পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

কুলসুমকে নির্যাতনের ব্যাপারে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর কুলসুমের গত ১৭ আগস্ট একটি লিখিত দেন। সেখানে তিনি মেয়ের লাশ দেশে আনা ও আট মাসের বকেয়া বেতন পাওয়ার আবেদন করেন। মেয়ের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনে তিনি জানান, মেসার্স এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেয়েকে তিনি সৌদিতে পাঠিয়েছিলেন। তবে ওই আবেদনে সৌদিতে পাঠানোর স্থানীয় মাধ্যম আব্দুর রাজ্জাকের নাম তিনি উল্লেখ করেননি।

নাসিরনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ওই মেয়ের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে সৌদি থেকে পাঠানো কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে মেয়েটি দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া যেহেতু দুই দেশের সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে লাশ দেশে এসেছে সেক্ষেত্রে আমারা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।

সংবাদটি শেয়ার করুন